চরমে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি, মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র দৌলতে বাড়ছে আমদানি নির্ভরতা
মোদী আমলে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি শঙ্কার কারণ হয়ে উঠেছে। রপ্তানির তুলনায় দেশের আমদানির পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। দেশ ক্রমেই আমদানি নির্ভর হয়ে পড়ছে। আমদানির খরচ মেটাতে ডলারের চাহিদা পাল্লা দিয়েই বাড়চ্ছে, পাশাপাশি ক্রমশই পড়তে শুরু করেছে টাকার দাম। দেশের অর্থনীতি বিপদ সীমায় পৌঁছে গিয়েছে।
মোদী ক্ষমতায় এসেই মহাধুমধাম করে মেক ইন ইন্ডিয়ার ঘোষণা করেছিলেন। ২০১৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন মোদী। বলা হয়েছিল, দেশের মাটিতেই বিশ্বমানের পণ্য তৈরি হবে। উৎপাদন শিল্পে কল-কারখানার উৎপাদন প্রতি বছরে ১২ থেকে ১৪ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। ২০২২ সালের মধ্যে দেশের উৎপাদন ক্ষেত্রে নতুন ১০ কোটি কর্মসংস্থানের কথা বলা হয়েছিল। লক্ষ্য ছিল জিডিপিতে উৎপাদন শিল্পের অংশ বিপুল ভাবে বাড়ানো।
বিদেশি কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীদের জন্যে উন্মুক্ত করা দেওয়া হয়েছিল সবক্ষেত্রে। ধীরে ধীরে দেশের প্রায় সব উৎপাদন ক্ষেত্রেই ১০০ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগের ছাড়পত্র দিয়েছে মোদী সরকার। দেশে কল-কারখানায় উৎপাদনের প্রায় ১০০টি ক্ষেত্র রয়েছে। তিনটি বাদে, প্রায় সবক্ষেত্রেই ১০০ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগে ছাড় দেওয়া হয়েছে। মহাকাশ প্রযুক্তিতে ৭৪ শতাংশ এবং প্রতিরক্ষায় ৪৯ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগের জন্যে উন্মুক্ত করা হয়েছে। দেশের সংবাদমাধ্যমেও ২৬ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগের নিদান দিয়েছে মোদী সরকার।
আট বছরে মেক ইন ইন্ডিয়ার সৌজন্যে দেশের রপ্তানি বাণিজ্য এখন তলানিতে, আমদানি গগনচুম্বী। ক্রমেই বাড়ছে আমদানি। পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের আগস্টে ৩,৩০০ কোটি ডলারের রপ্তানি বাণিজ্য হয়েছে। বিগত বছরের আগস্টের তুলনায় তা ১.১৫ শতাংশ কম। চলতি আগস্টে আমদানি বাণিজ্য হয়েছে ৬,১৬৮ কোটি ডলারের। যা গত বছরের আগস্ট মাসের তুলনায় ৩৬.৮ শতাংশ বেশি। ক্রমেই আমদানি নির্ভরতা বাড়ছে।
পাল্লা দিয়ে দেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণও বাড়ছে। ২০২১ সালের আগস্টে দেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল প্রায় ১,১৭১ কোটি ডলার। চলতি বছরের আগস্টে সেই পরিমাণ ২,৮৬৮ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এক বছরে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে আড়াইগুণ।
আমদানির খরচ পূরণ করতে ডলারের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে, যা টাকার দামের পতনকে আরও নীচে ঠেলে দিচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে, টাকার পতন ঠেকাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাজারে ডলার খরচ করছে। দেশের ডলার ভাণ্ডারে টান পড়ছে। শুধু গত দুই সপ্তাহেই ১,০০০ কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে। ডলার ভাণ্ডার কমে আসা অর্থনীতির জন্যে বিপজ্জনক। বেকারত্ব শঙ্কার কারণ হয়ে উঠেছে। মোদী-শাহর বন্ধু কর্পোরেটরা দেশকে ঘুর পথে লুটে চলেছেন। কোন পথে দেশের বাণিজ্য? কোন পথে অর্থনীতি? ক্রমশ জোরালো হচ্ছে আঁধার।