সাইরাসের সফরনামা
সাইরাস পালোনজি মিস্ত্রি, তাঁর নামে ছিল না টাটা। তাও তিনি রতন টাটার এককালের উত্তরাধিকারী। মাত্র ৫৪ বছরের থেমে গিয়েছে তাঁর জীবন। উল্কার গতিতে উত্থান আর আকস্মিক বিদায়ের মাঝে থেকে গেলেন শিল্পপতি সাইরাস। নওরোজি সাকলতওয়ালার পর টাটা পদবিহীন হয়েও টাটাদের ব্যবসা সামলানো দ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলেন সাইরাস। টাটা গোষ্ঠীর ষষ্ঠ চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেছেন সাইরাস।
১৯৬৮ সালের ৪ জুলাই তদানিন্তন বম্বের এক পার্সি পরিবারে জন্ম সাইরাসের। তাঁর পরিবার আয়ারল্যান্ডের নাগরিকত্ব গ্রহণ করলেও সে পথে হাঁটেননি সাইরাস। স্কুলের পাঠ চুকিয়ে লন্ডনে পাড়ি দিয়েছিলেন সাইরাস। ইম্পিরিয়াল কলেজ, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার সাইরাস যোগ দেন লন্ডন বিজনেস স্কুলে। তারপর ইন্টারন্যাশনাল এগজিকিউটিভ মাস্টার্স ইন ম্যানেজমেন্ট ডিগ্রি অর্জন।
দেশে ফিরে পারিবারিক ব্যবসায় নামেন সাইরাস। ১৯৯১ সালে সাপুরজি পালোনজি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের ডিরেক্টর হিসাবে কাজ শুরু করেছিলেন। ২০০৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর টাটা সন্সের বোর্ডে যোগ দেন সাইরাস। ১৯৯০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২০০৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টাট এলেক্সি লিমিটেডের ডিরেক্টরের দায়িত্ব সামলেছিলেন। ২০০৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টাটা পাওয়ার কোম্পানির ডিরেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৩ সালে ব্রিটিশ সাপ্তাহিক ‘দ্য ইকনমিস্ট’-এর এক প্রতিবেদনে সাইরাসকে ব্রিটেন এবং ভারত, দুই দেশেরই গুরুত্বপূর্ণ শিল্পপতির আখ্যা দিয়েছিল।
২০১২ সালে রতন টাটার উত্তরাধিকারী হিসেবে টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যানের পদে বসানো হয়েছিল সাইরাসকে। ২০১৩ টাটা তিনি টাটা সন্সের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। টাটা স্টিল, টাটা মোটরস, টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিস, টাটা পাওয়ার, টাটা টেলিসার্ভিসেস, ইন্ডিয়ান হোটেলস, টাটা গ্লোবাল বেভারেজেস এবং টাটা কেমিক্যালসের মতো সংস্থার দায়িত্ব আসে তাঁর কাঁধে।
চেয়ারম্যান হওয়ার চার বছরের মাথায় ছন্দপতন, ২০১৬ সালের ২৪ অক্টোবর সাইরাসকে তাঁর পদ থেকে অপসারিত করে টাটা সন্সের বোর্ড। শুরু হয় আইনি যুদ্ধ। সুপ্রিম কোর্ট অবধি গড়িয়েছিল সেই যুদ্ধ। টাটা এবং মিস্ত্রিদের ৭০ বছরের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠেছিল।কর্পোরেট ইতিহাসের অন্যতম তিক্ত ও দীর্ঘ লড়াইয়ের পর অবশেষে দেশের শীর্ষ জয়ী হয়েছিল টাটা গোষ্ঠী। পরাজিত নায়ক সাইরাস পথ দুর্ঘটনায় চলে গেলেন ৪ সেপ্টেম্বর।