চোখে পড়ছে না লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি, মোদী সরকারের সাফাই গাইতেই ব্যস্ত নির্মলা
লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির গ্রাসে গোটা দেশ, আম জনতার ক্রয় ক্ষমতার গণ্ডি পেরিয়ে গিয়েছে জিনিসের দাম। তাও নিরুত্তর মোদী সরকার। অর্থমন্ত্রীর কোন হেলদোল নেই। তিনি চিন্তিত কোথায় মোদীর ছবি টাঙানো হল কিনা! ওই নিরোর মতোই ব্যাপার, সে সময় রোম পুড়ছিল আর আজ ভারত মূল্যবৃদ্ধির ফলে পুড়ছে। নিরোর বেহালা বাজানোর মতো মোদী সরকারের অর্থমন্ত্রীও দেশবাসীর দুর্দশা দেখতে পারছেন না। অর্থমন্ত্রীর দাবি, দেশে কোথাও মূল্যবৃদ্ধি নেই। সবটাই নাকি তারা নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছেন। স্বভাবতই অর্থমন্ত্রীর এই দাবি ঘিরে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
৭ সেপ্টেম্বর ভারত-মার্কিন বিজনেস কাউন্সিলের সম্মেলন মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে এমনই মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী। মন্ত্রক সামলানোর চেয়ে মোদী সরকারের হয়ে সাফাই গাইতেই বেশি পছন্দ করেন নির্মলা দেবী, তা বিগত মোদী সরকারের আমলেই দেখা গিয়েছিল। অর্থমন্ত্রীর দাবি, দেশে মূল্যবৃদ্ধি নেই। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ এবং সাধারণের সাধ্যের মধ্যে রেখেছেন তারা। তিনি আরও দাবি করেন, বিগত দুবছর ধরে দেশের আর্থিক নীতিকে নাকি স্থিতিশীল রেখেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। সেই কারণেই নাকি অতিরিক্ত টাকা ছাপার দরকারই পড়েনি। নির্মলা সীতারমণের দাবি অনুযায়ী, এখন আমেরিকার ফেডারেল ব্যাঙ্ক বা ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক যে সব সিদ্ধান্ত নেবে বলে ভাবছে, তা নাকি অনেক আগেই নিয়ে ফেলেছে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
কিন্তু অর্থমন্ত্রীর কথা আর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দাবির মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ। গত কয়েক মাসে আকাশ ছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির কারণেই এক নাগাড়ে রেপো রেট বা সুদের হার বাড়িয়ে গিয়েছে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর সাফ বলেছেন, মূল্যবৃদ্ধির হার স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত রেপো রেট বাড়ানো ছাড়া তাদের আর কোন গতি নেই। জন সাধারণের উপর তা বোঝা হয়েই চাপছে। এখন রেপো রেট ৫.৪০ শতাংশে পৌঁছেছে। বাড়ি-গাড়ির ঋণে সুদের হার ক্রমেই বাড়ছে।
কেবল রিজার্ভ ব্যাঙ্কই নয়, বিভিন্ন আর্থিক সমীক্ষার রিপোর্ট নির্মলার উল্টো কথাই বলছে। দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের হাল-হকিকত নিয়ে আমেদাবাদের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট সমীক্ষা চালিয়েছে। করোনা সংক্রমণের দাপট কমার পরেও বাজার সজীব হয়নি। বিকিকিনি কমায় লাভের অঙ্কেও টান পড়েছে। কাঁচামালের খরচ লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাঁচামালের দাম বাড়লে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে। আদপে জিনিসের দামও বাড়বে। শিল্পমহল বলছে, গত বছরের নিরিখে ১০ শতাংশের বেশি উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এবারের ব্যবসাও কম হয়েছে। ৭৭ শতাংশ সংস্থা দাবি করছে লাভের মুখ দেখেনি তারা।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ভারতের মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৭.৭৯ শতাংশ, আট বছরের মধ্যে সর্বাধিক। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মত অনুযায়ী, স্বাভাবিক মুদ্রাস্ফীতির হার ৫ শতাংশের মধ্যে থাকা। কিন্তু সেই গণ্ডি অনেক আগেই পেরিয়েছে। জুলাই মাসে মূল্যবৃদ্ধির হার কিছুটা কমলেও স্বাভাবিকের ধারে কাছেও নেই। কোন কোন মহলের দাবি, দেশে আগস্ট মাসের মূল্যবৃদ্ধির হার প্রায় ৭ শতাংশের গণ্ডি ছুঁয়ে ফেলতে পারে, ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা থাকছেই। এসবের পরেও জনসমক্ষে নিজের দলের সরকারের হয়ে সাফাই গেয়ে অর্থমন্ত্রী দাবি করবেন, সবটাই নাকি নিয়ন্ত্রণে। অর্থমন্ত্রীর এহেন শিশুতোষ আচরণে ক্ষুব্ধ দেশের সাধারণ মানুষ।