উত্তরবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

মালবাজারের মঞ্চ থেকেই চা শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় আন্দোলনের ডাক অভিষেকের

September 11, 2022 | 3 min read

উত্তর মাটিতে জমি পুনরুদ্ধারে ঝাঁপিয়েছে ঘাসফুল শিবির। ১১ সেপ্টেম্বর রবিবার আজ মালবাজারে চা শ্রমিকদের সম্মেলনে যোগ দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মালবাজারের ফরওয়ার্ড ক্লাবের মাঠে ১২০০ জন চা শ্রমিককে নিয়ে কেন্দ্রীয় সম্মেলন আয়োজিত হল। চা বাগানের শ্রমিকদের নিয়ে এমন সম্মেলন এই প্রথম। যদিও এর আগে হলদিয়ায় শ্রমিক স্বার্থে এমন সম্মেলন করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। এদিন সেবক কালীবাড়িতে পুজো দিয়ে, শ্রমিক সম্মেলনের মঞ্চ থেকে চা শ্রমিকদের অধিকার একটি সরব হন অভিষেক। চা বাগান নিয়ে মোদী সরকার একটিও প্রতিশ্রুতি রাখেনি বলে আক্রমণ শানান অভিষেক। শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়ে, তাদের অধিকার ও দাবি আদায়ের জন্যে লড়াইয়ের ডাক দেন অভিষেক। চা শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় সংঘবদ্ধ লড়াইয়ের আহ্বান জানান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, কাঁধে বা পিঠের ঝুড়িতে সন্তান বেঁধে রেখে বাগানে কাজ করার দিন শেষ। এবার চা শ্রমিকদের সন্তানদের রাখার জন্য বাগানের কাছেই ক্রেশ তৈরি হবে বলে জানান অভিষেক। সেই সঙ্গেই চা শ্রমিকদের পিএফ, গ্র্যাচুইটি আদায় নিয়ে দিল্লির দরবারে বড় আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দিলেন অভিষেক।

এদিন তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই চা মালিকদের বিরুদ্ধে চা শ্রমিকদের পিএফ, গ্যাচুইটি না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। চা শ্রমিকদের পিএফ, গ্যাচুইটি মোদী সরকারের বিষয়। কাল থেকেই পিএফ-গ্যাচুইটির দাবিতে বড় আন্দোলন শুরু হবে। প্রতিটা শ্রমিকের অ্যাকাউন্টে মোদী সরকারকে টাকা পাঠাতে হবে। এর জন্য তিন মাসের সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছে অভিষেক। প্রতিটা চা বাগানে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে তিনি। কাজ না হলে জেলার পিএফ অফিস ঘেরাও করার নিদানও দেন তিনি। সেই সঙ্গেই তিনি বলেন, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ না হলে ১ জানুয়ারি থেকে উত্তরঙ্গে বিজেপি বিধায়ক, সাংসদের বাড়ি ঘেরাও করার কথা বলেন। তিনি জানান, দাবিপূরণ না হলে দিল্লির শ্রমমন্ত্রকে গিয়ে চলবে আন্দোলন। কলকাতা থেকে তিনি আসবেন। দরকারে দিল্লি অবধি যাবেন। অভিষেক শ্রমমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে চা বাগানের প্রায় ৪ লক্ষ শ্রমিকের জন্য পরিচয়পত্র তৈরি করে দিতে হবে। তিনি বলেন, “৩ মাসের মধ্যে প্রত্যেক শ্রমিকের হাতে আইডি কার্ড পাবেন। অনেকের অভিযোগ ছিল পিএপ, গ্যাচুইটি না পাওয়া নিয়ে। আপনাদের পিএপ, গ্যাচুইটির দাবি ন্যায্য। আমি শ্রমমন্ত্রীকে বলব ৬টা চা বলয়ের ৩ লক্ষ ৮৩ হাজার চা শ্রমিকের সবার যেন আগামীদিনে একটা করে আইডি কার্ড তৈরি হয়। তিন মাসের মধ্যে এটা শ্রম দফতরকে সুনিশ্চিত করতে হবে। ৩১ জানুয়ারি মধ্যে প্রতিটা শ্রমিকের হাতে আইডি কার্ড পৌঁছে যাবে। আমি কথা দিয়ে যাচ্ছি।”

এরপরেই বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে বলেন, বিজেপি ভাষণ দেয়, মমতা বন্দোপাধ্যায় রেশন দেয়। জন বার্লা বাড়ি বানিয়েছে, মল বানিয়েছে। আপনাদের দিয়েছে হাঁসের ডিম। তৃণমূল কংগ্রেস হাই কোয়ালিটির ডিভিডি। চালালে শুনতেও পাবেন, দেখতেও পাবেন। বিজেপি হচ্ছে ভাঙা অডিও ক্যাসেট। চোখে দেখতে পাবেন না। শুনতে পাবেন। ​​অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন বীরপাড়া, লঙ্কাপাড়া, তুলসিপাড়াসহ বন্ধ থাকা ৭টি চা বাগান কেন্দ্র সরকার অধিগ্রহণ করে নতুন করে খোলার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু তা হয়নি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা বাস্তবায়িত করে দেখিয়েছেন। বিজেপি যা বলে করে না। তৃণমূল কংগ্রেস যা বলে তাই করে।’

এদিন কার্যত চা বলয়কে গেরুয়া মুক্ত ডাক দিলেন তিনি। বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়িয়ে অভিষেক বলেন, চা বলয়গুলিতে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়েও তা পূরণ করেনি কেন্দ্র। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি রেখেছেন। চা বাগানে ২ টাকা কেজি দরে চাল, বিনামূল্যে রেশন পাওয়া যাচ্ছে। তিনি জানান, চা শ্রমিকদের পাশে রয়েছে তৃণমূল। শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত চা শ্রমিকদের দাবি দাওয়া নিয়ে তৃণমূল সোচ্চার হবে।

এদিন উত্তর, দক্ষিণ বিভাজন নিয়েও সরব হন অভিষেক। তাঁর কথায়, উত্তরবঙ্গ নিয়ে তাঁর আপত্তি রয়েছে। কোনও উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ, গৌড়বঙ্গ নয়। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ, দার্জিলিং থেকে দেগঙ্গা একটাই বঙ্গ। সে বঙ্গের নাম পশ্চিমবঙ্গ। তিনি আরও বলেন, আজকের সমাবেশ কোনও রাজনৈতিক সমাবেশ নয়। পুরসভা, বিধানসভা, লোকসভা কোনও নির্বাচন নেই। পঞ্চায়েত ভোটও দেরি। প্রতি ২ মাস অন্তর আসবেন বলেছিলেন। তাই গিয়েছেন। এই সমাবেশকে কথা রাখার অভিষেক বলেন তিনি। এরপরই বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে বলেন, ভোটের সময় বহিরাগতরা, পরিযায়ী পাখির মতো কেউ কেউ আসে, ভোটের পর আর তাদের দেখতে পাওয়া যায় না। চা শ্রমিকদের জন্যে একাধিক ঘোষণার পাশাপাশি দলের রাজ্য থেকে বুথস্তরের নেতাদের একাধিক বার্তাও দিয়েছেন অভিষেক। তিনি বলেন, রাজ্য নেতা থেকে বুথ নেতারা কেউ যদি ব্যক্তিস্বার্থে দলকে ব্যবহারকে করে তাহলে তার পাশে দল থাকবে না। তবে যারা ইডি সিবিআইযয়ের ভয়ে গিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা, সে প্রশ্নও তুললেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#North Bengal, #abhishek banerjee, #tmc

আরো দেখুন