দিলীপ-সুকান্তর কুস্তিতে বেসামাল বঙ্গ বিজেপি
দ্বন্দ্ব রোগ কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে বঙ্গ বিজেপিকে। ক্রমেই গোটা গেরুয়া শিবিরে ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। বিজেপির প্রাক্তন ও বর্তমান রাজ্য সভাপতি দিলীপ-সুকান্তর কাজিয়া দিন দিনে বেড়েই চলেছে। রাজনৈতিক বিরোধীদের সঙ্গে লড়াই নয়, দিলীপ-সুকান্তর কাজিয়া সামাল দিতেই বেসামাল বঙ্গ বিজেপি। গত সেপ্টেম্বরে দিলীপের পদে বসেন সুকান্ত। অন্যদিকে, দিলীপকে তুষ্ট করতে জাতীয় পদ দেয় বিজেপি। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি, দিলীপ বঙ্গেই পড়ে আছেন।
রাজ্য সভাপতির পদ বসে বঙ্গ বিজেপির বিক্ষুব্ধ নেতা সতর্ক করেছিলেন সুকান্ত। সেই সময় দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, “সুকান্তর অভিজ্ঞতা কম। সবে দায়িত্ব পেয়েছেন। কিন্তু ওঁর জানা উচিত যারা এতদিন আন্দোলন করেছেন, তাঁদের গুরুত্ব দেওয়া জরুরী।” কার্যত নয়া রাজ্য সভাপতির সতর্কবার্তা উড়িয়ে দিয়েছিলেন দিলীপ। পাল্টা জবাব দিয়েছিলেন সুকান্তও। প্রকাশ্যে প্রাক্তন ও বর্তমান রাজ্য সভাপতির বাদানুবাদ ঘিরে সরগরম হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। কান পাতলে শোনা যায়, রাজ্য বিজেপি সুকান্ত ও দিলীপ শিবিরের মধ্যে ভাগ হয়ে গিয়েছে। দিল্লি বিজেপিও দুজনের কাজিয়া মেটাতে পারেনি।
সম্প্রতি হওয়া চিন্তন শিবির নিয়েও মুখ খুলেছিলেন দিলীপ। প্রশিক্ষণ শিবিরে নিয়ে দিলীপ বলেন,’আমি জানি না। পঞ্চায়েত নিয়ে নিশ্চয়ই হবে হয়ত। রাজনৈতিক পার্টির সম্মেলন যখন, তখন নিশ্চয়ই রাজনীতি এবং নির্বাচন আলোচনার বিষয় থাকবে। পুরো সূচি আমার জানা নেই।’ দিলীপের এহেন দাবির পর সুকান্তর সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব নিয়ে জল্পনা জোরালো হয়। শোনা যায়, হেস্টিংসে বিজেপির বৈঠকে সুকান্ত বেরিয়ে যাওয়ার পর ঢোকেন দিলীপ। গত মাসে বিজেপির দলীয় কার্যালয় হেস্টিংসের সাংগঠনিক বৈঠকে ছিলেন না দিলীপ। হেস্টিংসের আট তলায় একলা দিলীপ, আর পুরোদমে ৪ তলায় তখন দরজা বন্ধ করে বৈঠক করছেন সুকান্তরা। দলের অন্দরের খবর দিল্লিতেও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বঙ্গ বিজেপির নেতাদের বৈঠক দিলীপের বাড়িতে করার বিষয়ে নিমরাজি ছিলেন সুকান্ত। আজও সে বৈঠক হয়নি। অনুপম হাজরার লাইভ প্রসঙ্গে দিলীপের সমর্থন সুকান্তের অস্বস্তি বাড়িয়েছে।
কদিন আগেই সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ বলেন, “সিবিআই গত কয়েক বছর ধরে এখানে (এ রাজ্যে) ‘সেটিং’ করছিল। অর্থ মন্ত্রক সবকিছু বুঝেই ইডিকে বাংলায় পাঠিয়েছে। সেটিং যারা করেছে এখন তাঁরা বলছে, ‘ইডি কেন?’ কারণ এই কুকুরটা পোষ মানবে না, বড় কুকুরকে কামড়াবে।” পাল্টা জবাবে অধুনা সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “সিবিআই কীভাবে কাজ করে দিলীপদা কী করে জানলেন? দিলীপদা কোথা থেকে বললেন আমাদের জানা নেই। কেন্দ্রীয় এজেন্সি কীভাবে কাজ করে এটা কোনও রাজনৈতিক নেতার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। যদি কেউ মন্ত্রী হন তাহলে তাঁর পক্ষে জানা সম্ভব৷ আমাদের কাছে এ ব্যাপারে কোনও তথ্য নেই।” এতেও প্রকাশ্যে আসে দুই নেতার ফাটল।
সুকান্ত আদপে দিলীপকে পাত্তাই দিতে চান না। রাজ্য সভাপতি হাওয়ার পর থেকেই তাদের মধ্যে তুলনা টানা হচ্ছে তাও ঝেড়ে ফেলতে চান সুকান্ত। এক বেসরকারি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিজেপি রাজ্য সভাপতি বলেন, ‘‘তাঁর (অর্থাৎ দিলীপ ঘোষের) জুতোয় পা গলানো নয়। নিজের জুতো পরে দৌড় দেওয়াই ভাল। না হলে রাস্তা একই হয়ে যাবে। তাই নিজের জুতো পরে দৌড় দেওয়ার চেষ্টা করছি।” এতেই সাফ হয়ে গিয়েছে দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে। নিজের ঘরানা তৈরি করে দিলীপকে বঙ্গ বিজেপি থেকে মুছে দিতে চাইছেন সুকান্ত। আর দিলীপও মরিয়া দাপট বজায় রাখতে। দুয়ে মিলে সংঘাতের আবহ তৈরি হয়েছে।