শাসক পক্ষ এবং বিরোধী পক্ষের বিক্ষোভ, পাল্টা বিক্ষোভে বহুদিন বাদে সরগরম বিধানসভা
রাজ্য বিধানসভা এক সময় সরকার পক্ষ এবং বিরোধী পক্ষের লড়াইয়ে সরগরম থাকত। কংগ্রেস আমলে বিরোধী দলের ভূমিকায় নজর কারত বামেরা। বাম জমানার শেষ দিক থেকে লড়াইটা অনেকাংশেই একপেশে হয়ে যায়। ২০১৬ সালের ভোটে বাম-কংগ্রেস মিলিয়ে বিরোধীরা ৭৭টি আসন জিতলেও বিধানসভায় দেমন দাপট দেখাতে পারেন নি।
বৃহস্পতিবার বহুদিন বাদে ফের বিধানসভায় যুযুধান দই শিবিরকে দেখা গেল। বিক্ষোভ, পালটা বিক্ষোভে উত্তাল অধিবেশন কক্ষ। শেষপর্যন্ত ওয়াকআউট করল বিজেপি। পালটা গোটা বিধানসভা চত্বরে মিছিল করে ঘুরলেন তৃণমূল বিধায়করাও। শুভেন্দু অধিকারীর ‘লেডি পুলিশ’ মন্তব্য এবং দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে শাসক এবং বিরোধী শিবিরের বিরোধীদের তরজায় উত্তেজনা ছড়ায় বিধানসভায়। সেই সঙ্গে দেখা গেলে দু’শিবিরের পোস্টার-যুদ্ধও।
সরকারি নিয়োগ-সহ বিভিন্ন দুর্নীতির বিষয় নিয়ে আলোচনার দাবিতে মুলতুবি প্রস্তাব আনা হয়েছিল বিজেপির দলনেতা শুভেন্দুর তরফে। কিন্তু বৃহস্পতিবার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তা খারিজ করে দেন। তাঁর যুক্তি, ‘আদালতে বিচারাধীন বিষয়’ বলে খারিজ করে দেওয়া হয়েছে বিরোধীদের প্রস্তাব। স্পিকারের এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরেই উত্তেজনার সূত্রপাত হয় বিধানসভায়। বিজেপি বিধায়করা নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে ছোট ছোট পোস্টার বের করে বিক্ষোভ শুরু করে দেন। সেই সঙ্গে স্লোগান দেওয়া শুরু করেন, ‘চাকরি চোরের সরকার, আর নেই দরকার।’
শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে সেই বিক্ষোভ শুরু হতেই পালটা আসরে নামেন তৃণমূল বিধায়করা। বড় বড় পোস্টার নিয়ে হাজির বিধানসভায়। তৃণমূল বিধায়কদের পোস্টারগুলিতে লেখা, ‘ডোন্ট টাচ মাই বডি, আই অ্যাম মেল, মোদিজির ইঞ্চি ছাতির।’ ‘ডোন্ট টাচ মাই বডি, আই অ্যাম মেল, অল ইওর পলিসিস উইল ফেইল’, ‘আচ্ছে দিনের সরকার ইজ এ ফেয়ারিটেইল, ডোন্ট টাচ মাই বডি, আই অ্যাম মেল।’ সেই সঙ্গে তৃণমূল বিধায়কদের পালটা স্লোগান, ‘চোর চোর চোরটা। শিশিরবাবুর ছেলেটা।’ এই বিক্ষোভ প্রসঙ্গে পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘এরকমটা আমরা আগে দেখিনি। বিজেপি দীর্ঘদিন ধরে হট্টগোল করছে। কোনওরকম আলোচনায় আসতে চাইছে না।’ তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রর প্রশ্ন,’বিরোধী রাজনীতি করতে গেলে এভাবে ছুঁয়ো না ছুঁয়ো না করলে হয় না। উনি কি মেয়ে না ছেলে সেটা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী নন?’ পালটা বিজেপির অগ্নিমিত্রা পল অভিযোগ করেন, ‘এটা অত্যন্ত নিম্নমানের রাজনীতি। আমার দল এই ধরনের রাজনীতি করতে শেখায়নি।’
সব মিলিয়ে বহুকাল বাদে বিধানসভা শাসক পক্ষ এবং বিরোধী পক্ষের বিক্ষোভ, পাল্টা বিক্ষোভে সরগরম হয়ে থাকল। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, গণতন্ত্রে তো এরকমটাই কাম্য।