রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে কি অধীর চৌধুরীকে সরানো হচ্ছে?

September 17, 2022 | 3 min read

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে কি অধীর চৌধুরীকে সরানো হচ্ছে? এরকমই একটি জল্পনা শুরু হয়েছে। কংগ্রেস সূত্রে খবর, অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ক্ষেত্রে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। ফলে এবার সম্ভবত অধীর চৌধুরীকে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতির পদ থেকে সরানো হচ্ছেই।

কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনের আগেই প্রতিটি রাজ্যে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে নির্বাচন হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোনও রাজ্যেই তা হয়নি। এ বার কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের (AICC) তরফ থেকে প্রদেশ কংগ্রেস কমিটিগুলিকে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে, তাঁরা যেন অন্তর্বর্তী সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীকেই প্রদেশ সভাপতি মনোনীত করতে অনুরোধ করেন। এ বিষয়ে প্রদেশ কংগ্রেস কমিটিগুলিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রস্তাব পাশ করারও বার্তা দেওয়া হয়েছে। ২২ সেপ্টেম্বর কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি করে ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু হবে। তার আগে রাজ্য নেতৃত্বকে প্রস্তাব পাশ করাতে বলা হয়েছে। কংগ্রেস নেতাদের একাংশের আশঙ্কা, এর ফলে দলের মধ্যে ফের সাংগঠনিক নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।

ফলে মনে করা হচ্ছে নির্বাচন কমিটির নয়া সিদ্ধান্তে ভাগ্য নির্ভর করছে অধীর চৌধুরীর। তিনি আর কতদিন প্রদেশ সভাপতি থাকবেন তা নির্ভর করছে নতুন সর্বভারতীয় সভাপতি কে হবেন তার উপর। এআইসিসি সূত্রে খবর, গান্ধী পরিবার ঘনিষ্ঠ কেউ কংগ্রেস সভাপতি হলে অধীরই প্রদেশ সভাপতি থেকে যাবেন। অথবা তাঁর ঘনিষ্ঠ কাউকে প্রদেশের দায়িত্ব দেবেন সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীরা। কিন্তু অন্য কেউ সর্বভারতীয় সভাপতির চেয়ারে বসলে সরে যেতে হবে বর্তমান প্রদেশ সভাপতিকে। সেক্ষেত্রে শশী থারুরের মতো কেউ দায়িত্ব পেলেও অধীরের চেয়ার ধরে রাখা কঠিন। কারণ ব্যক্তিগতভাবে এঁদের বেশিরভাগই তাঁকে পছন্দ করেন না।

অক্টোবরে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচন। তবে সর্বভারতীয় সভাপতি পদে নির্বাচন হলেও নতুন সভাপতিকে দলের অন্য পদাধিকারীদের বেছে নেওয়ার অধিকার দিয়েছে নির্বাচন পরিচালন কমিটি। সেইসঙ্গে প্রদেশ সভাপতিদের (Pradesh Congress President) ক্ষেত্রে তিনিই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী হবেন। সেক্ষেত্রে বছরে শেষে অধীরের দায়িত্ব কমতে পারে বলে এআইসিসি সূত্রে খবর।

কংগ্রেস এখন এক ব্যক্তি এক পদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর এর ফলে বেশ কিছু সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যেমন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীর (Adhir Ranjan Chowdhury) ক্ষেত্রে। রাজ্যের সাংসদ অধীর চৌধুরী লোকসভায় বিরোধী দলনেতা। একই সঙ্গে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি বা পিএসির চেয়ারম্যান। আবার প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে কাজ করছেন তিনি। সেক্ষেত্রে প্রদেশ সভাপতির পদই ছাড়তে হতে পারে অধীর চৌধুরীকে।

জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি বিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে একই বৃত্তে আনতে চাইছে কংগ্রেস। একই কৌশল বামেদেরও। কিন্তু রাজ্য রাজনীতিতে বাম-কংগ্রেস জোট কোনও রাজনৈতিক ফসল তুলতে পারেনি। বরং কংগ্রেসের সাথে জোট না হওয়ার ফলে বিজেপিকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠেছে বামেরা। বেশ কয়েকটি নির্বাচন সমীক্ষা করে সেই ইঙ্গিত পেয়েছে তাঁরা। ফলে কংগ্রেসের সাথে সরাসরি জোটে আগ্রহ অনেকটাই কমেছে বাম শিবিরের। দলের অন্দরেও বামেদের সঙ্গে জোট করা নিয়ে অধীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে। এছাড়াও, এই মুহূর্তে জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি বিরোধী জোটের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু অধীর চৌধুরী নিয়মিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেসকে লাগাতার আক্রমণ করে চলেছেন। যার ফলে কেন্দ্রে বিজেপি বিরোধী জোট গঠনের প্রক্রিয়া ব্যবহত হচ্ছে বা হতে পারে বলে মনে করছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশের মতে, অধীর চৌধুরী প্রদেশ সভাপতি হওয়ার পর থেকে কংগ্রেসের রক্তক্ষরণ অব্যাহত। তাই এ ক্ষেত্রে নতুন প্রদেশ সভাপতি নিয়োগের পথেই হাঁটবে কংগ্রেস। এবং তার উপরেই নির্ভর করবে রাজ্যে আগামিদিনে কংগ্রেসের রাজনৈতিক কৌশল।

এআইসিসি সূত্রে খবর, অধীর নিজেই প্রদেশের দায়িত্ব ছাড়তে চেয়ে সোনিয়ার কাছে তদ্বির করেন। কিন্তু আপাতত দায়িত্ব সামলাতে নির্দেশ দেন সভানেত্রী। তবে পরবর্তী সভাপতি হিসাবে অধীর উত্তরবঙ্গ ও জঙ্গলমহলের দুই নেতার নাম প্রস্তাব করেন বলে খবর। কিন্তু অধীরের ইচ্ছা-অনিচ্ছা সবই নির্ভর করবে নয়া সভাপতির উপর। তিনি বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর নেতাদের অপছন্দের। ফলে প্রদেশ সভাপতি হিসাবে তার প্রস্তাবিত নাম গৃহীত হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এদিকে, শনিবার কলকাতায় যাচ্ছেন কংগ্রেসের দুই হেভিওয়াট নেতা জয়রাম রমেশ ও দিগ্ববিজয় সিং। সেখানে পরবর্তী প্রদেশ সভাপতি কে হতে পারেন তা নিয়ে আলোচনা হবে বলে বিধানভবন সূত্রে জানা যাচ্ছে। অধীরের বিক্ষুব্ধরাও নিজেদের মত জানানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছেন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Adhir Ranjan Chowdhury, #AICC, #Pradesh Congress President

আরো দেখুন