বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত সামাজিক মাধ্যম
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার সোমবার রাতে সম্প্রচারিত হয়েছে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে। তারপর থেকেই তা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Justice Abhijit Gangopadhyay) সাক্ষাৎকার নিয়ে কার্যত দু’ভাগে বিভক্ত সামাজিক মাধ্যম।
একজন বিচারপতি কর্মরত অবস্থায় কি আদৌ সংবাদমাধ্যমে কোনও সাক্ষাৎকার দিতে পারেন? অনেকেই এই প্রশ্ন তুলেছেন সামাজিক মাধ্যমে। কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) একাধিক প্রবীণ আইনজীবী মন্তব্য করেছেন, ‘‘স্বাধীনতার পর কখনই সংবাদমাধ্যমে সরাসরি মুখ খুলে কোনও বিচারপতি এমন নজির গড়েননি। এরপর যদি বিচারপ্রার্থীরা বিচারব্যবস্থার বিরুদ্ধে মুখ খোলে, তখন কী হবে?’’ হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অরুণাভ ঘোষের দাবি, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ও গাইডলাইন অনুযায়ী একজন কর্মরত বিচারপতি এভাবে সংবাদমাধ্যমে ইন্টারভিউ দিতে পারেন না।’’ রাজ্যসভার বামপন্থী সাংসদ তথা প্রবীণ আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যর বক্তব্য, ‘‘কর্মরত বিচারপতি ইন্টারভিউ দিতে পারেন কি না, তা যুক্তিসাপেক্ষ।’’
সামাজিক মাধ্যমে কলকাতা হাইকোর্টের এক প্রবীণ আইনজীবী লেখেন, নিজের বাসভবনে বসে একটা নির্দিষ্ট সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে একজন ‘সিটিং’ বিচারপতি যা বললেন আইনের ছাত্র হিসেবে বলব, সেটার মধ্যে ম্যাচুরিটির অভাব রয়েছে। ওই আইনজীবী বলেন, ‘একটা রাজনৈতিক দলের নেতা এবং সাংসদের ( অভিষেক ব্যানার্জি) মন্তব্যের প্রেক্ষিতে উনি কি ব্যবস্থা নেবেন বলে এক সময়ে মনস্থির করে ছিলেন ( কিন্তু কার্যত নেন নি) তা প্রেসের সামনে বলাটা বড্ড বোকা বোকাই শোনাল। কোন জাস্টিস প্রিডিটারমাইন্ড হতে পারেন না।’
আবার আরেক আইনজীবী সমাজিকমাধ্যমে লেখেন, ‘‘১৯৯৭ সালের ৭ই মে, সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট (এর সব বিচারপতিরা) মিটিং এর সিদ্ধান্ত অনুসারে ‘বিচারপতিদের আচরণ বিধি’ ঘোষিত হয়। নিজেদের জন্য আচরণবিধি ঠিক করেন, সুপ্রিম কোর্টের সব বিচারপতিরা মিলিতভাবে। মোট ১৬টি সিদ্ধান্ত বা বিধি আছে এই আচরণবিধিতে, যেগুলো মেনে চলবেন বলে অঙ্গীকার করেছিলেন, বিচারপতিরা। ঠিক হয়, দেশের সব হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা এই আচরণবিধি মেনে চলবেন। এই আচরণ বিধির ৯ নম্বর বিধি হল, ‘A Judge is Expected to let his Judgment speak, for themselves. He shall not interview to the Media’.’’
যদিও সাক্ষাৎকারের সময় স্বয়ং বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়েছেন, ‘‘বেঙ্গালুরু প্রোটোকলের মধ্যে থেকেই আমি এই ইন্টারভিউ দিচ্ছি। বিচারপতিরা কী করতে পারেন, তার রূপরেখা রয়েছে এখানে। এই প্রোটোকলেই বলা আছে বিচারপতিদেরও বাক স্বাধীনতা আছে। আর আমি বিচারব্যবস্থা নিয়ে কিছু বলছি না। রাজনৈতিক কোনও কথাও বলছি না।’’