বিরোধীদের অপরাধী বলে দাগিয়ে দিতে সংশোধনী আনল মোদী সরকার? উঠছে প্রশ্ন
চলতি বছরের এপ্রিলে সংসদে অপরাধী শনাক্তকরণ আইনের সংশোধনী পেশ হয়েছিল। বিরোধীদের দাবি ওই বিলে রাজনৈতিক বিরোধীদের অপরাধী হিসেবে দাগিয়ে দেওয়ার ফিকির করেছে মোদী সরকার। ঠিক কী বলা হয়েছিল সংশোধনীতে? রাজনৈতিক ধর্না বা সরকার বিরোধী কোনও বিক্ষোভে সামিল হয়ে কেউ গ্রেপ্তার হলে, পুলিশকে তাঁর শারীরিক পরিমাপসহ বায়োলজিক্যাল নমুনা সংগ্রহ করার ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছিল। এই নিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন বিরোধী সাংসদেরা। বিরোধীদের দাবি, নয়া সংশোধনী আনলে, আইনটি মোদী সরকারের রাজনৈতিক বিরোধীদের অপরাধী বলে দাগিয়ে দেওয়ার অস্ত্র হয়ে উঠবে। তবে কি বিরোধীদের অপরাধী বলে দাগিয়ে দিতে সংশোধনী আনল মোদী সরকার? নানা মহলে উঠছে প্রশ্ন।
বিল পাশ করানোর সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, রাজনৈতিক আন্দোলনে ধৃতদের শারীরিক মাপজোখ ও বায়োলজিক্যাল নমুনা সংগ্রহ বাধ্যতামূলক করা হবে না। কিন্তু বিজেপির প্রতিশ্রুতি রাখার ইতিহাস যে বড়ই করুন, তা ভুললে চলে না। গতকাল অপরাধী শনাক্তকরণ আইন (২০২২)-এর যে গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক আন্দোলনে ধৃত ব্যক্তির অতীত অপরাধের ইতিহাস থাকলে ওই নিয়ম কার্যকর হবে না। সেক্ষেত্রে পুলিশ চাইলে শারীরিক মাপজোখ ও নমুনা সংগ্রহ করতে পারে।
পুনর্বিবেচনার কথা বলেও তা রাখেনি বিজেপি। এই নিয়ে ক্ষুব্ধ দেশের বিরোধী দলগুলি। এই মর্মে, তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক সুখেন্দুশেখর রায় জানান, পুনর্বিবেচনার আশ্বাস দিয়েও জোর করে এই ধারা এনে নিজেদের মত চাপিয়েছে মোদী সরকার। তৃণমূল সাংসদ বলেন দেশের শাসক দলের নেতারা নিজেরাই অপরাধী, তাই তারা সকলকে অপরাধী ভাবেন।
উল্লেখ্য, মোদী সরকারের দাবি, মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে অভিযুক্তের শারীরিক মাপজোখ ও বায়োলজিক্যাল নমুনা, যেমন চোখের মণি, রেটিনার স্ক্যান, ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। বিরোধীরা জানিয়েছিলেন, এই ঘটনা ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মানবাধিকারে হস্তক্ষেপ। বিরোধীদের আপত্তি উঠতেই শাহ জানিয়েছিলেন, যে অপরাধগুলির ক্ষেত্রে সাজা ন্যূনতম সাত বছর, কেবলমাত্র সেই অপরাধে অভিযুক্তদের বায়োলজিক্যাল নমুনা সংগ্রহ করা হবে। কিন্তু ২০ সেপ্টেম্বর জারি হওয়া বিজ্ঞপ্তিতে তেমন কোনও শর্তের উল্লেখই করা হয়নি। পুলিশ ইচ্ছে করলেই যেকোন অপরাধে অভিযুক্তদের শারীরিক ও বায়োলজিক্যাল যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। এই ঘটনায় সরব বিরোধীরা। বিভিন্ন সময়ে নানান ধরণের তথ্যও ফাঁস হওয়ার অভিযোগ সামনে আসে, এক্ষেত্রেও অভিযুক্তের বায়োলজিক্যাল তথ্য কতটা সুরক্ষিত থাকবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েই যায়।