বিশ্বে প্রতি ৪ সেকেন্ডে অনাহারের বলি ১! ভয়ঙ্কর পরিসংখ্যান রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায়
একুশ শতকেও অনাহারে মৃত্যু! প্রতি চার সেকেন্ডে বিশ্বে খেতে না পেয়ে মারা যাচ্ছে এক জন করে মানুষ। এই ভয়ঙ্কর পরিসংখ্যান সামনে এসেছে। মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের ৭৭তম সাধারণ সভায় একটি খোলা চিঠিতে ৭৫টি দেশের ২৩৮টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এই সমস্যা তুলে ধরেছে। প্রতিকারের জন্যে তারা সব দেশকে একজোট হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের ৩৪.৫ কোটি মানুষ তীব্র খাদ্যসঙ্কটে ভুগছেন। এই মুহূর্তে বিপদের চরমসীমায় দাঁড়িয়ে রয়েছে ৪৫টি দেশের আরও ৫ কোটি মানুষ। ২০১৯ সালের পর খাদ্যসঙ্কটে ভোগা মানুষের সংখ্যাটা দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। শক্তিধর দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা দাবি করেছিলেন, আর দুর্ভিক্ষ দেখতে হবে না বিশ্বকে। সে দাবি আজ ভিত্তিহীন। আজ দুর্ভিক্ষের মুখে দাঁড়িয়ে সোমালিয়া। ইথিয়োপিয়া, নাইজিরিয়া, ইয়েমেনের মতো দেশগুলির লক্ষ লক্ষ মানুষ না খেতে পেয়ে মরণাপন্ন। দুর্ভিক্ষের কালো মেঘ গ্রাস করেছে গোটা আফ্রিকা মহাদেশকে। ইয়েমেনের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মতে, দুর্ভিক্ষ কোনও একটি কারণে হয় না। মানবতার প্রতি অবিচারই হল দুর্ভিক্ষের আসল কারণ। একদিকে কিছু মানুষ প্রাচুর্য আর বৈভবে মগ্ন, তখনই বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে সামান্য প্রাণ বাঁচানোর মতো খাবারটুকুও নেই। বিলম্ব না করে মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানোর ডাক দিচ্ছেন তারা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সমস্যার গভীরে পৌঁছলে খাদ্যসঙ্কটের অজস্র কারণের হদিশ পাওয়া যাবে। দারিদ্র, সামাজিক অন্যায়, লিঙ্গবৈষম্য, কৃষিক্ষেত্রে বিশ্ব উষ্ণায়ন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব, অতিমারি, সেই সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের মতো একাধিক কারণের সমাহার হয়েছে নেপথ্যে। মুদ্রাস্ফীতির কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ক্রমেই বাড়ছে। সঙ্কটও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।
পরিসংখ্যান বলছে, অতিমারি চলাকালীন বিশ্বব্যাপী ধনকুবেরদের সম্পত্তি বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে খাদ্যের সঙ্কট। উদাহরণস্বরুপ ভারতের কথাই দেখা যাক না। বিশ্বের ধনীতমদের তালিকায় চলতি বছর আদানি গোষ্ঠী দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। প্রথম দশের মধ্যেই রয়েছে অম্বানীরাও। অন্যদিকে, বিশ্বের ক্ষুধাসূচকের তালিকায় ২০২১ সালে ১১৬টি দেশের মধ্যে ভারত ছিল ১০১তম স্থানে! প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে বিশ্বের ক্ষুধাসূচকের তালিকায় ভারত স্থান ছিল ৫৫ নম্বরে। মাত্র আট বছরে মোদী আমলে দেশে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা কী হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, তা বলে দিচ্ছে পরিসংখ্যান। একদল অর্থনীতিবিদদের মতে, ভারতে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হল সামাজিক বৈষম্য, সম্পদের অসম বণ্টন, সরকারি নীতির ব্যর্থতা।