রিলের ঝুলন মুমতাজের চোখে real ঝুলন, পোস্ট করেছিলেন video-ও
‘শাবাশ মিঠু’ সিনেমায় ঝুলন গোস্বামীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন মুমতাজ সরকার। প্রসঙ্গত, শাবাশ মিঠু ছবিটি মিতালী রাজের জীবনীর উপর ভিত্তি করে নির্মাণ করা হয়েছে। এই ছবিতে একজন ক্রিকেটারের চরিত্রে অভিনয় করার জন্যে অভিনেত্রীকে ঝুলনের বোলিং, চালচলন, ক্রিকেটীয় দক্ষতা সবকিছুই অনুকরণ করতে হয়েছে। যাঁর চরিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন, তিনিই যখন খেলা থেকে অবসর নিচ্ছেন, তখন ছবিতে সেই কিংবদন্তির চরিত্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা এক বেসরকারি সাংবাদমাধ্যমের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন অভিনেত্রী।
মুমতাজের কথায় ফুটে উঠেছে ঝুলনের অসাধারণ ক্রিকেটজীবনের কথা। অভিনেত্রীর মতে, যেভাবে ঝুলন ক্রিকেট খেলেছেন, তাতে তার আরও অনেক কিছু পাওয়ার কথা ছিল। চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে ঝুলনকে বেশি করে চিনতে পেরেছেন মুমতাজ। ওঁর বল করা, ওঁর কঠোর পরিশ্রম, সব কিছুই সিনেমায় দেখানোর চেষ্টা করেছেন তিনি। তার কথায়, যে পরিশ্রম ঝুলন এত দিন ধরে করেছেন, সেটা এই অল্প কয়েক দিনে করতে গিয়ে টের পেয়েছেন, তা কতটা কঠিন।
মুমতাজ নিজেই জানিয়েছেন, ‘শাবাশ মিঠু’ সিনেমায় ঝুলনের চরিত্রে কাজ করতে করতে শুটিংয়ের শেষের দিকে প্রায় পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে ক্রিকেট শেখা এবং অন্য কোনও ক্রিকেটারের মতো করে ক্রিকেট খেলা বা কাউকে অনুকরণ করা, দুটোর মধ্যে অনেক তফাৎ। অভিনেত্রী আরও জানান, ঝুলনের আচরণ, বল করার স্টাইল, শরীরী ভাষা অনুকরণ করা খুবই কঠিন ছিল। ঝুলনের বল করার একটা দুর্দান্ত স্টাইল রয়েছে। মুমতাজের কথায়, ঝুলন যেভাবে বল করতে দৌড়ন, যে ভাবে বল করার আগে লাফান, আমার তো মনে হয় ব্যাটারের ওখানেই অজ্ঞান হয়ে যাওয়া উচিত। শুটিংয়ের আগে অনেক দিন ধরে ওঁর সম্পর্কে পড়াশোনা করেছিলেন মুমতাজ।
তিনি আরও জানিয়েছেন, বল ছাড়ার আগের মুহূর্তে ওঁর লাফের পিছনে কতটা শক্তি থাকে, তা না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। তাই জন্যেই এত জোরে বল করতে পারেন। সেটা অনুকরণ করতে গিয়ে তাকে প্রচণ্ড খাটতে হয়েছে। ঝুলনের চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে আমাকে অভিনেতা নয়, ক্রিকেটার হতে হয়েছে। কারও চরিত্রে অভিনয় করতে গেলে অনেক সমস্যা হয়, সকলের শারীরিক দক্ষতা, শরীরী গঠন এক নয়, সেক্ষেত্রে অনেক বাধা আসে। তারপর স্পোর্টসম্যানের চরিত্রের ক্ষেত্রে বাড়তি অনেককিছু শিখে নিতে হয়।
মুমতাজের মতে, তার আগ্রহ এবং অভিজ্ঞতার কারণেই এত বাধা সত্ত্বেও চরিত্রটা উতরে গিয়েছ। পাশাপাশি তিনি নিজেকেও ক্রিকেটার হিসেবে তৈরি করে নিয়েছিলেন। দুটোর মেলবন্ধনেই তিনি ‘শাবাশ মিঠু’ সিনেমায় ঝুলনের বা ঝর্ণা গোস্বামীর চরিত্রে অভিনয় করতে পেরেছেন। পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় ও সুশীল বাবুকে ধন্যবাদ দিয়েছে মুমতাজ কারণ তারাই অভিনেত্রীকে শিখিয়ে নিয়েছেন। মুমতাজ নিজেও প্রচুর অনুশীলন করেছেন। তাছাড়া ব্যক্তিগতভাবে ঝুলনকে অনেক আগে থেকেই চিনতেন মুমতাজ। সিনেমা করার আগে বেশ কিছু অনুষ্ঠানে তাদের সঙ্গে দেখা ও কথা হয়েছে। ফলে আলাদা করে পরিচয় করার দরকার পড়েনি।
ঝুলনের অবসরের দিনে একজন সাধারণ নারী হিসেবে ওকে কুর্নিশ জানিয়েছেন অভিনেত্রী। মুমতাজের কথায়, ক্রিকেটার হিসেবে ঝুলনের যাত্রা শনিবার শেষ হয়েছে। এমন এক ক্রিকেটারকে আর মাঠে দেখা যাবে না, এটা ভেবেই তার মন খারাপ লাগছে। ঝুলন সবার কাছেই অনুপ্রেরণা। আগামী দিনে আরও মেয়ে তাকে দেখে এগিয়ে আসবে। মহিলাদের ক্রিকেটের জন্যে ঝুলন যা করেছেন, তার জন্য হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মুমতাজ। তার মতে, ঝুলনের জন্যেই মেয়েদের ক্রিকেট আলাদা পরিচিতি পেয়েছে। একটা ছোট গ্রাম থেকে এসে লড়াই করে ঝুলন কোন উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছেন! সেই কারণেই সবার কাছে সে একটা দৃষ্টান্ত।