অবলুপ্ত হয়েছে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানোর রীতি, সাদা পায়রা, শোলার পাখিতে চলছে প্রথা
এককালে কৈলাসে উমার ফেরার বার্তা পৌঁছে দিত নীলকণ্ঠ পাখি। কিন্তু কালের নিয়মে সে প্রথা আজ প্রায় লুপ্ত। বরণ শেষে ঠাকুরদালান থেকে বেয়ারারা কাঁধে তুলতো মাকে। উমা বাপের বাড়ি ছেড়ে কৈলাসে ফিরছেন। মহাদেবকে খবর পাঠাবে কে? রাজা, মহারাজারা বিসর্জনকালে কৈলাসের উদ্দেশ্যে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়াতেন। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী মনে করা হত, সেই নীলকণ্ঠ কৈলাস পৌঁছে শিবকে বলত, মা আসছেন। রাবণবধের আগে রামচন্দ্র নীলকণ্ঠ পাখির দর্শন পেয়েছিলেন। তাই নীলকণ্ঠ পাখিকে শুভ মনে করা হয়।
বাংলার একাধিক রাজবাড়িতে দশমীর দিন নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানো হত। কিন্তু, আজ আর রাজা, মহারাজারা নেই। ঠাকুর দালানগুলো দাঁড়িয়ে রয়েছে, পুজোও হয় প্রতিবছর। দশমীতে আর নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানো হয় না। পরিবেশ সংক্রান্ত আইনের জটিলতায় এই প্রথা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে কয়েকটি রাজবাড়িতে এখনও নিয়ম রক্ষার খাতিরে এখন শোলার নীলকণ্ঠ পাখি বানিয়ে ওড়ানো হয়। কোথাও আবার সাদা পায়রা আকাশে ওড়ানো হয়।
বাংলায় এখনও নীলকণ্ঠ পাখি দেখা যায়। কর্ণাটক, ওডিশা, তেলেঙ্গানার স্টেট বার্ড হল ইন্ডিয়ান রোলার বা নীলকণ্ঠ পাখি। অতীতে পুজোর সময় রাজ পরিবারের সদস্যরা নীলকণ্ঠ পাখি জোগাড় করে রাখতেন। বেড়েছে পাখির দাম, পাখির সংখ্যাও কমছে। বণ্যপ্রাণ রক্ষা আইনের কারণে প্রায় সকল রাজবাড়িই পাখি ওড়ানোর রীতি বন্ধ করে দিয়েছে। এই পাখি ধরলে এখনও জেল ও জরিমানা দুই হতে পারে। এখন কলকাতার শোভাবাজারের বড় রাজবাড়িতে এখন শোলার জোড়া নীলকণ্ঠ পাখি তৈরি হয়। তারপর গ্যাস বেলুনের মাধ্যমে তা আকাশে উড়িয়ে দেওয়া হয়। বিষ্ণুপুর রাজবাড়িতে গত পাঁচ বছর ধরে সাদা পায়রা উড়িয়ে এই রীতি পালন করা হচ্ছে। কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি ও শেওড়াফুলি রাজবাড়িতে এককালে নীলকণ্ঠ ওড়ানো হলেও, এখন তা পুরোপুরি বন্ধ।