বিজয়ায় বিষাদের সুরেই অপেক্ষার প্রহর গোনা শুরু
দশমী মানেই বিষন্নতা, একরাশ মন খারাপ। এইদিনটিই উমার সাথে শেষ। আবার দীর্ঘ এক বছরের অপেক্ষা। এবার মা দুর্গাকে বিদায় জানানোর পালা। কয়েকটা দিনের আনন্দ, উচ্ছ্বাস, ছুটি, আড্ডা সবকিছুকে বিদায় জানানোর পালা। সবাইকে আবার ফিরতে হবে ইঁদুর দৌড়ের কর্মব্যস্ততায়। আজ মা তাঁর শ্বশুর ঘরে ফিরবেন।
উমার বিদায়
সকালে পুজো শুরু হয়। অল্প সময়ে মা দুর্গা এবং তাঁর পরিবারের জন্যে ভোগের আয়োজন করা হয়। বিচ্ছেদ কখনোই সহজ নয়- এদিনের মন্ত্রোচ্চারণ যেন কোথাও একটা মন খারাপের অনুভূতি সৃষ্টি করে। দধিমঙ্গল বা শীতল পান্তার সাথে পুঁটি মাছ দেবীকে উৎসর্গ করা হয়। এটাই বাংলার মাটির গন্ধ, মাটির মানুষদের খাবার। তাই বাড়ির মেয়েটিকেও সেই খাবার খাইয়েই বিদায় জানানো হয়। বরণ ডালায় ১০৮ সামগ্রী সাজিয়ে দেবীকে বিদায় জানানো হয়। কাঁসার পাত্রে দর্পণ হিসেবে জল রেখে দেবীর মুখ দর্শন করানো হয়। মহিলারা সেই জলে হাত ডোবানোকে সৌভাগ্য মনে করেন।
সন্ধ্যায় বিদায়ের আগে দেবীর মুখ পানপাতা দিয়ে মুছিয়ে মিষ্টিমুখ করানো হয়। সবশেষে প্রতিমার হাতে পান পাতা গুঁজে দেওয়া হয়।
সিঁদুর খেলা
বাঙালি বিবাহিত মহিলারা আটপৌড়ে লালপাড় সাদা শাড়ি পরে মা দুর্গার পায়ে সিঁদুর ঠেকাতে আসেন এবং পরিবারের শান্তি এবং সমৃদ্ধির জন্যে প্রার্থনা করেন। তারপর হয় বাংলার ঐতিহ্যবাহী সিঁদুর খেলা, যেখানে বিবাহিত মহিলারা একে অপরকে সিঁদুর পরিয়ে দেন।
বিসর্জন
ট্রাকে করে আলোক শোভার মাধ্যমে সন্ধ্যেবেলা হয় প্রতিমা বিসর্জন। লেক, নদী, পুকুরে ভাসানো হয় প্রতিমা। তার সাথে অবশ্যই থাকে ঢাকের তালে ভাসান নাচ। যা দুর্গা পুজোর অন্যতম জনপ্রিয় অঙ্গ। এই সময় কর্তৃপক্ষকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হয়, যাতে কোনওভাবেই খুব বেশি পরিবেশ দূষণ না হয়। বিভিন্ন সংস্থাও এই বিষয়ে এগিয়ে আসে।
চারিদিক গমগম করে ‘বল দুর্গা মাইকি’ শব্দে। সবার মনে একটাই প্রার্থনা ‘আবার এসো মা’।
পুজো শেষ হলেও এই দিন থেকেই আরও একবছরের অপেক্ষার শুরু। দিন গোনার শুরু। আশার সূত্রপাত হয় এই দিনই ‘আসছে বছর আবার হবে’।