দুর্গোৎসবের হেরিটেজ তকমার কাণ্ডারী তপতী গুহঠাকুরতাকে ধন্যবাদটুকু দেয়নি মোদী?
বাংলা ও বাঙালির দুর্গোৎসবকে ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজের তকমা দিয়েছে ইউনেস্কো। দুর্গোৎসবের এই বিশ্বজনীন স্বীকৃতি জয়ের নেপথ্যে ছিলেন ইতিহাস গবেষক তপতী গুহঠাকুরতা। কিন্তু এতো আনন্দের মাঝেও তাঁর গলায় আক্ষেপের সুর। কতকটা হয়ত অভিমান থেকেই, সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তপতীদেবী স্পষ্ট জানিয়েছেন, তাঁকে এবং তাঁর টিমকে ধন্যবাদ জানানোর মতো ন্যূনতম সৌজন্যটুকুও দেখায়নি মোদী সরকার।
দুর্গাপুজোর এই স্বীকৃতি আদায়ের জন্যে দীর্ঘদিন ধরেই লড়াই চলছিল। এর আগে দুবার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। অবশেষে দেশের সংস্কৃতি মন্ত্রক ইতিহাসবিদ তপতী গুহঠাকুরতার দ্বারস্থ হয়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী অধ্যাপিকা গবেষক তপতী গুহঠাকুরতা কলকাতার সেন্টার ফর সোশ্যাল স্টাডিজে দীর্ঘদিন যাবৎ কর্মরত। কলকাতার ঐতিহ্য, ইতিহাস ছিল তাঁর গবেষণা বিষয়। সংস্কৃতি মন্ত্রকের প্রস্তাব পেয়ে ২০১৮ সালে গবেষণার কাজ শুরু করেন তপতী গুহঠাকুরতা। সাত মাস পর তিনি ও তাঁর দল নিজেদের গবেষণা ইউনেস্কোর কাছে পেশ করে। ২০২১ সালে ইউনেস্কো দুর্গাপুজোকে ঐতিহ্যের তকমা দেওয়ার কথা জানায়।
বাংলার এই অনন্য নজির স্থাপনের পরেই আসরে নেমে পড়েছে, মোদী সরকার। কৃতিত্ব কেড়ে নিতে উঠে পড়ে লেগেছেন তারা। মোদী সরকারের দাবি, এই কৃতিত্ব তাদেরই। যাঁর নিরলস পরিশ্রম এই সাফল্য নিয়ে এল, এই পরিস্থিতিতে সেই তপতী গুহঠাকুরতার প্রতিক্রিয়া জানতে আগ্রহী ছিল আম জনতা থেকে সংবাদমাধ্যম। ১ সেপ্টেম্বর কলকাতার রেড রোডে ইউনেস্কোকে ধন্যবাদজ্ঞাপন অনুষ্ঠানের মঞ্চে তপতীদেবীকে দেখা গিয়েছিল। রাজ্যের তরফে তাঁকে উত্তরীয়, ডোকরার দুর্গামূর্তি দিয়ে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছিল।
কিন্তু মোদী সরকারের তরফে কিছুই করা হয়নি, তপতীদেবীকে ন্যূনতম ধন্যবাদটুকুও জানানো হয়নি বলেই অভিযোগ। তিনি ওই বেসরকারি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, রাজনৈতিক তরজা চলছে, তাতে তিনি অবাক হননি। অধ্যাপিকার কথায়, সমস্ত রাজনীতিকের সাফল্যের নেপথ্যে ভাল গবেষণা ও মেধাবীদের ভূমিকা থাকে। কিন্তু এটাই দুর্ভাগ্যজনক যে এত বড় একটা সাফল্যের পরও সংস্কৃতি মন্ত্রকের তরফে কেউ তাঁদের সামান্য ধন্যবাদসূচক বার্তাও পাঠাল না।” আদপে মোদী সরকার নিজে কৃতিত্ব ছিনিয়ে নিতে চাইছে। তপতীদেবীদেরকে আড়ালে ঠেলে দিয়ে জনসমক্ষে জয়ের বরমালা গলায় পড়তে চাইছেন মোদী। আর মেধা নীরবে ঢেকে যাচ্ছেন রাজনীতির দাপটে! সত্য সেলুকাস কী বিচিত্র এই দেশ বাক্যটি বোধহয় এই কারণে আজও প্রাসঙ্গিক।