কেন খুন হল হরিদেবপুরের অয়ন? রহস্য যেন সিনেমার চিত্রনাট্য!
অজয় দেবগনের ‘দৃশ্যম’ মনে আছে? মেয়ের ভিডিও তোলা কিশোরকে খুন করে লোকাতে সফল হয়েছিল অজয়। হরিদেবপুরের অয়ন মন্ডল খুনের ঘটনায় শেষরক্ষা হল না। মৃতদেহ লোপাটের চেষ্টা করেও ধরা পরে গেল খুনি পরিবার।
কবে কী হয়েছিল?
দশমী: রাতে ১১টা নাগাদ মত্ত অবস্থায় বান্ধবী প্রীতি জানার রমাকান্তপুরের উদয়াঞ্চলের বাড়িতে যান ২৫ বছর বয়স্ক অয়ন। কিন্তু সে সময় তাঁর বান্ধবী বাড়িতে ছিল না। সে কারণে নাকি বিরক্ত হয়ে বান্ধবীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ান অয়ন। পরে বান্ধবী ফিরলে তাঁকে মারধর করেন অয়ন। বান্ধবীর মা রুমা জানাকেও মারধর করেন ওই যুবক।
একাদশী: বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ৫০ মিনিট নাগাদ অয়ন মণ্ডলের মাকে ফোন করেন তাঁর বান্ধবী। জিজ্ঞাসা করেন, অয়ন কোথায়? তাকে সে ফোনে পাচ্ছে না। তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই অয়নের বাড়িতে গিয়ে রীতিমতো কান্নাকাটি করেন অয়নের বান্ধবী!
দ্বাদশী: দিন শুক্রবার বাড়ির বহু দূরে মগরাহাটে তার দেহ উদ্ধার হয়। ওই দিন রাতেই গ্রেপ্তার করা হয় অয়নের বান্ধবী, তাঁর মা, ভাইকে। শনিবার সকালে গ্রেপ্তার করা হয় বান্ধবীর বাবা, ভাইয়ের দুই বন্ধু ও এক গাড়িচালককে।
কি করে খুন হন অয়ন?
পুলিশ সূত্র অনুযায়ী দশমীর দিন অয়নকে বাড়িতে ডেকে ইট, বাঁশ-রড দিয়ে মারধর করা হয়। তাতেই মৃত্যু হয় তার। খুনের পর বান্ধবীর বাবাই অয়নের দেহ লোপাটের পরিকল্পনা করে। তিনি দুই বন্ধুকে ডেকে আনেন। তারপর পাশের নির্মীয়মাণ বহুতল থেকে ত্রিপল আনা হয়। তাই দিয়ে মোড়া হয় অয়নের মৃতদেহ। তারপর মিনিডোর গাড়িতে করে মৃতদেহ হরিদেবপুর থেকে নিয়ে যাওয়া হয় মগরাহাটে। সেখানে এক নির্জন স্তনে মর্তদেহ ফেলে আসা হয়। অয়নের মোবাইল ফোন বন্ধ করে বিষ্ণুপুরের নেপালগঞ্জে এক পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। এর পরেই মৃত অয়নের বান্ধবীর ভাইয়ের এক বন্ধু পালিয়ে যান ওড়িশায়, এক আত্মীয়ের বাড়িতে গা ঢাকা দিতে।
খুনের মোটিভ কী?
পুলিশ সূত্রে দাবি, এই ত্রিকোণ সম্পর্কের জেরেই খুন হয়েছেন অয়ন মণ্ডল। অয়নের সঙ্গে তার বান্ধবী প্রীতির আট বছর প্রেমের সম্পর্ক ছিল । জানা যাচ্ছে একদিন বান্ধবী বাড়ি না থাকা অবস্থায় সেখানে পৌঁছয় অয়ন। তখন বান্ধবীর মা রিমা জানা অয়নকে বাড়িতে ঢুকিয়ে জড়িয়ে ধরেন। তারপর থেকেই অয়নের সঙ্গেও তার বান্ধবীর মায়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ফলে বান্ধবী বাড়িতে না থাকলে সেখানে যেত অয়ন। এদিকে আবার প্রীতির সঙ্গেও সম্পর্ক বজায় রেখে চলত সে। অয়নের বান্ধবীর বাবা জেনে যায় যে অয়নের সঙ্গে শুধু তাঁর মেয়ে নই, তাঁর স্ত্রীরও সম্পর্ক রয়েছে। এর পড়ি শুরু হয় খুনের চক্রান্ত। পুলিশ সূত্রের খবর, খুনের ব্লু-প্রিন্ট ছিল নাকি অয়নের বান্ধবীর মায়ের। আর অয়নের বান্ধবীর বাবাই ছক কষেন কীভাবে দেহ লোপাট করা হবে।