ফের হিন্দি আগ্রাসন, হিন্দি ভাষা নিয়ে একগুচ্ছ প্রস্তাব সংসদীয় কমিটির
মোদী আমলে ক্রমেই মাথাচাড়া দিচ্ছে হিন্দি আগ্রাসন। রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের সরকারি ভাষা হিন্দি হোক, কেন্দ্রীয় সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পঠন-পাঠনের মাধ্যম হোক হিন্দি, হিন্দিভাষী রাজ্যে হাইকোর্টের কাজ শুরু করে সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বাধ্যতামূলক ইংরেজির বদলে নিয়ে আসা হোক হিন্দি; মোদী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে এমনই সুপারিশ করেছে সরকারি ভাষা সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি (Parliamentary Committee)।
শোনা যাচ্ছে সেই সুপারিশ সেপ্টেম্বর মাসে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছে মোদী সরকার (Modi Govt)। হিন্দি ভাষায় শিক্ষাদান প্রসঙ্গে কমিটির সুপারিশ, শ্রেণীকক্ষে শিক্ষাদানের মাধ্যম এবং পঠন-পাঠনের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য কাজকর্মের ভাষা হিন্দিই হওয়া উচিত। কমিটির মতে, ইংরেজির ব্যবহার ঐচ্ছিক হতে পারে। ক্ষেত্রেও সংক্রান্ত পঠন-পাঠনের ক্ষেত্রেও একই নীতি নিতে চাইছেন তারা, অর্থাৎ কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়, নবোদয় বিদ্যালয়, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, আইআইটি, আইআইএম, এইমস, সব কিছুকেই হিন্দি মাধ্যমের অধীনে আনার চেষ্টা চলছে। যেক্ষেত্রে ইংরেজি ছাড়া একেবারে সম্ভব নয়, শুধুমাত্র সেখানেই ইংরেজিতে শিক্ষাদান চলতে পারে। যদিও তা কীভাবে ধীরে ধীরে হিন্দিতে করা হবে, তাও খতিয়ে দেখবে কমিটি।
হিন্দির প্রচলনের এই নীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সরকারি চাকরির পরীক্ষায় ইংরেজি (English) তুলে তার বদলে হিন্দি নিয়ে আসার সুপারিশ করা হয়েছে। কমিটির সাফাই, বাধ্যতামূলক ইংরেজির পেপার, ইংরেজি বেশি গুরুত্বপূর্ণ এমন ধারণা তৈরি করে, তাই কমিটির লক্ষ্য এমন ধারণা তৈরি না হতে দেওয়া। কেবল সরকারি চাকরির পরীক্ষা নয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম যাতে হিন্দিতে হয়, রিপোর্টে সেটাও সুনিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। সরকারি কর্মী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে হিন্দি যাতে অন্যতম মাপকাঠি হয়, সে দিকেও নজর দিতে বলা হয়েছে। যারা হিন্দিতে কাজকর্ম এড়িয়ে যান, তাঁদের কাছে উত্তর চাইতে বলা হয়েছে। সন্তোষজনক উত্তর না মিললে তা সংশ্লিষ্ট কর্মীদের বার্ষিক পারফরম্যান্স রিপোর্টে নথিভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
হিন্দি ভাষায় (Hindi) বিশেষ দক্ষতা প্রয়োজন এমন কোনও সরকারি পদ তিন বছরেরও বেশি খালি থাকলে, প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে তার দায় নেওয়ার কথা বলা হয়েছে রিপোর্টে। যে রাজ্যগুলিতে সরকারি ভাষা হিন্দি, সেই রাজ্যগুলির নিজ নিজ হাইকোর্টের যাবতীয় কাজকর্ম হিন্দিতে করার কথাও বলা হয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের ভাষা হিন্দিই হওয়া উচিত বলেও জানাচ্ছে কমিটি। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা দেশে হিন্দির জনপ্রিয়তা আরও বাড়ানোর জন্য কমিটি এমন সব নিদান দিচ্ছে। সরকারি বিজ্ঞাপনের বাজেটের অর্ধেকের বেশি যাওয়া উচিত হিন্দি বিজ্ঞাপনে এমনও সুপারিশ করেছে কমিটি। হিন্দি বিজ্ঞাপন বড় আকারে প্রথম পাতায় এবং ইংরেজি বিজ্ঞাপন ছোট পরিসরে ভিতরের পাতা বা শেষের পাতায় দেওয়ার প্রস্তাবও নাকি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মোদী সরকার জোর করে গোটা দেশে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে, দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধীরা সরব। দক্ষিণের রাজ্যগুলি তাদের বিরোধিতা আগেই জানিয়ে রেখেছে। এমতাবস্থায় এই প্রস্তাব নতুন করে বিতর্ক উসকে দিল।