FCI-এর দিন শেষ করে ঘুরপথে কৃষিক্ষেত্রের বেসরকারিকরণ সারছে মোদী সরকার?
কৃষক আন্দোলনের কারণে কৃষি আইন (Farm Laws) প্রত্যাহার করে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল মোদী সরকার। কিন্তু আইন বাতিল করলেও দেশের কৃষিক্ষেত্রকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা থেকে পিছু হটেনি মোদী সরকার। আন্দোলনের ভয়ে এবার আইনের ফাঁক গলেই বেসরকারীকরণের কাজ সেরে ফেলতে চাইছেন মোদী। ধান-গমের মতো খাদ্যশস্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থার অনুপ্রবেশ ঘটাতে চাইছে দেশের সরকার।
আগেই কেন্দ্রীয় খাদ্যসচিব এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এবার খাদ্যমন্ত্রকের অভ্যন্তরীণ নোটে তেমনই সুপারিশের দেখা পাওয়া গেল; প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে খাদ্যশস্য ক্রয়ের কাজে বেসরকারি কোম্পানিকে যুক্ত করতে হবে। বিরোধীদের অভিযোগ, কার্যত পিছনের দরজা দিয়ে কৃষি আইন কার্যকর করতে চলেছে মোদী সরকার (Modi Govt)।
গণবণ্টন ব্যবস্থা সংক্রান্ত খাদ্যমন্ত্রকের বিভিন্ন সুপারিশসহ ৬৮ পাতার নোট সদ্যই সামনে এসেছে। ওই নোটে দেখা যাচ্ছে, সাত নম্বর অনুচ্ছেদে খাদ্য সংগ্রহে বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে খাদ্যশস্য সংগ্রহের কাজটি করে ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া। যদিও কয়েকটি রাজ্যে বিকেন্দ্রীকরণ হয়েছে, যেমন ধান-গম কেনার দায়িত্বে থাকে রাজ্য সরকার এবং তাদের অধীনস্থ সংস্থা। বাংলায় এমনটা হয়। সেন্ট্রাল পুলের’ জন্য ধান সংগ্রহ করে রাজ্য সরকার। জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের আওতাধীন রেশন গ্রাহকদের সেন্ট্রাল পুল থেকেই খাদ্য সরবরাহ করা হয়।
খাদ্যশস্য সংগ্রহ ও বণ্টনের ক্ষেত্রে এফসিআইয়ের (FCI) মনোপলি ভেঙে দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলেই খাদ্যমন্ত্রকের অভ্যন্তরীণ নোটে জানানো হয়েছে। বেসরকারি সংস্থাকে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হবে। এই কাজে একটি নির্দিষ্ট বিধি ও ইনসেন্টিভের পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে। খাদ্যশস্য সংগ্রহ ও সরবরাহের জন্য বেসরকারি সংস্থার ক্ষেত্রে এফসিআইয়ের চেয়ে কম খরচ করতে হবে।
ধান, গম ইত্যাদি বিভিন্ন ফসলের ক্রয়মূল্য ধার্য করে কেন্দ্র। তা সরবরাহ তথা বণ্টনের জন্য বিভিন্ন খরচের অঙ্কও কেন্দ্রই নির্ধারণ করে। এফসিআই এবং রাজ্য সরকারগুলি খাদ্য সংগ্রহে নিযুক্ত সংস্থাগুলিকে নির্দিষ্ট হারে কমিশন দেয়। বেসরকারি সংস্থাকে পুরো দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হলে, ওই সংস্থাগুলিই কমিশন ও অন্যান্য খরচ পাবে। এই খাদ্যশস্য সংগ্রহ ও বণ্টনের জন্য দেশজুড়ে এফসিআইয়ের বৃহৎ পরিসরে পরিকাঠামো এবং বিপুল সংখ্যক কর্মী রয়েছে। ফলত, গোটা প্রক্রিয়া বেসরকারি সংস্থার হাতে চলে গেলে বিপুল সংখ্যক মানুষের কোনও কাজ থাকবে না। ফলে কর্মীদের ভবিষ্যত নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে।
খাদ্যমন্ত্রকের নোটে শস্য ক্রয়ের বিষয়ে বলা হয়েছে, দেশে যে যে এলাকায় জলাভাব রয়েছে, সেখানে ধান চাষ কামানোর কথা বলা হয়েছে। সরকারি উদ্যোগে ধান সংগ্রহ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন রয়েছে বলেও নোটে উল্লেখ করা হয়েছে। জলের অপ্রতুলতা রয়েছে এমন এলাকায় কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার পরিমাণ ও সংগ্রহ মূল্য কমানোর সুপারিশ করেছে মোদী সরকার। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, এই ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হলেই বাংলায় তার প্রভাব পড়বে। বাংলার পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে জলের অভাব রয়েছে। ওই নীতি কার্যকর হলেই সরকারি উদ্যোগে ধান কেনা কমে যাবে। কৃষি আরও বিপন্ন হয়ে পড়বে।