খুচরো মুদ্রাস্ফীতির হার শিখরে, মূল্যবৃদ্ধিই ভারতের অর্থনীতির কাঁটা, স্বীকার নির্মলার
মূল্যবৃদ্ধির আগুনে পুড়ছে ভারত, কিন্তু ফের বাড়ল মূল্যবৃদ্ধির হার। খুচরো পণ্যের বাজারে মূল্যবৃদ্ধির ক্রমশই বেড়ে চলেছে। বুধবার কেন্দ্রের বাণিজ্য মন্ত্রকের তরফে থেকে প্রকাশিত পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বরে খুচরো মুদ্রাস্ফীতির হার বেড়ে ৭.৪১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এপ্রিলের পর গত ছয় মাসের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। খুচরো বাজারে খাদ্যসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেই, মূল্যবৃদ্ধি সূচক নতুন মাত্রা পেয়েছে।
বিগত বছর জুলাইয়ে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির (price rise) পরিমাণ ছিল ৬.৬৯ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে তা আরও বৃদ্ধি পেয়ে ৭.৪১ শতাংশে পৌঁছেছে।চলতি অর্থবর্ষে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মূল্যবৃদ্ধির হারকে ২ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল। কিন্তু ডলার ও টাকার দামের ফারাক যত চওড়া হয়েছে, ততই মূল্যবৃদ্ধির পরিমাণ বেড়েছে। ডলারের দাম বাড়লে পণ্য আমদানির খরচ চড়তে থাকে, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায়। যার ফলে খুচরো বাজারের জিনিসের দাম বৃদ্ধি পায়। জ্বালানির দাম লাগাতার বাড়ায়, পরিবহণের খরচও বাড়ছে।
মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে এতদিন কার্যত কোনও হেলদোল প্রকাশ করেনি মোদী সরকার। কিন্তু সেপ্টেম্বরের পরিসংখ্যান প্রকাশ্যে আসতেই মোদী সরকারের অর্থমন্ত্রী নির্মলা (Nirmala Sitharaman) স্বীকার করলেন, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে নাজেহাল ভারত। মুদ্রাস্ফীতির হার ছ’মাসের মধ্যে সর্বোচ্চের নজির ছুঁয়েছে, আগস্ট মাসে দেশের শিল্পোৎপাদনও ০.৮ শতাংশ ধাক্কা খেয়েছে। উৎপাদন শিল্পে ০.৭ শতাংশ উৎপাদন কমেছে। খনির ক্ষেত্রে হ্রাসের পরিমাণ ৩.৯ শতাংশ।
মে মাস থেকে লাগাতার রেপো রেট বাড়িয়েও, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক খুচরো পণ্যের মুদ্রাস্ফীতিতে (Retail inflation) রাশ টানতে পারছে না। রেপো রেট গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫.৯ শতাংশে, ফলে ঋণ মেটানোর মাসিক কিস্তির খরচ ক্রমাগত বাড়ছে। প্রথমে অন্য পূর্বাভাস দিলেও, এখন অর্থনৈতিক সংস্থাগুলি বলেছে, ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে দেশের জিডিপি বৃদ্ধিহার ৭ শতাংশের কাছাকাছি থাকবে। একই পথে হেঁটে অর্থমন্ত্রীও সেই কথাই বলছেন।
এতদিন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর দাবি করে গিয়েছেন, বিশ্বের তুলনায় ভারতের অর্থনীতি, মূল্যবৃদ্ধি, জিডিপি বৃদ্ধিহার, যথেষ্ট স্বস্তিকর। কিন্তু মার্কিন মুলুকের ওয়াশিংটনের এক অনুষ্ঠানে সীতারামন স্বীকার করেছেন, মূল্যবৃদ্ধি এবং আর্থিক বৃদ্ধিহার ভারতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কারণে অর্থনীতি ধাক্কা খেয়েছে। সেই কারণেই জিডিপি (GDP) বৃদ্ধিহারের সম্ভাবনা নিয়েও পূর্বঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে তিনি সরে এসেছেন। সীতারামন সাফ বলছেন, আর্থিক বৃদ্ধিহার এবং মূল্যবৃদ্ধির জেরে ভারতের বৃদ্ধিহারের পূর্বাভাস কমাতেই হচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিকে স্তিমিত করেছে, তাও কার্যত স্বীকার করছেন অর্থমন্ত্রী।