সৌরভকে শাস্তি দিতেই কি BCCI-এর পদ কেড়ে নেওয়া হল?
এদেশে বাংলা ও বাঙালি বরাবার বঞ্চনার শিকার হয়েছে, সেই তালিকায় নতুন সংযোজন হল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রশাসক জীবন। সৌরভের প্রতি বঞ্চনার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এ রাজ্যের শাসক দল। দেশের সর্বোচ্চ আদালত বিসিসিআইয়ের সভাপতি পদে সৌরভকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও, অপসারিত হলেন সৌরভ। কিন্তু থেকে গেলেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ছেলে জয় শাহ। কেবল জয় শাহই নয়, গেরুয়া শিবিরের একাধিক নেতা, তাদের আত্মীয়রা ক্রিকেট প্রশাসনে থেকেই গেলেন, কোপ পড়ল কেবল বঙ্গ সন্তানের ঘাড়ে! পরিবারতন্ত্র নিয়ে অন্য দলকে আক্রমণ করা বিজেপি, রাজনীতির আঙিনা পেরিয়ে ক্রিকেট প্রশাসনেও রাজনীতির কারবার জাঁকিয়ে বসিয়েছে। তাই তো মহারাষ্ট্র বিজেপির সর্বেসর্বা আশীষ শেলার বিসিসিআইয়ের কোষাধ্যক্ষ হচ্ছেন, ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের ভাই অরুন সিং ধুমল আইপিএলের চেয়ারম্যান হতে চলেছেন, হেমন্ত বিশ্বশর্মা ঘনিষ্ঠ অসম ক্রিকেটের প্রধানকে বিসিসিআইয়ের জয়েন সেক্রেটারি করা হচ্ছে। কিন্তু কোন অঙ্কে বাদ গেলেন সৌরভ?
উত্তর একটাই, বিজেপির রাজনৈতিক অঙ্ক বলছে সৌরভের প্রয়োজন ফুরিয়েছে। বাংলার বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখেই সৌরভকে নিয়ে এগিয়েছিল বিজেপি। আদপে বিজেপি চায় পায়ে বেড়ি পরানো কাউকে, যাকে ইচ্ছে মতো ব্যবহার করা যায়। কিন্তু সৌরভ বিজেপির পোষ মানেননি। বারবার বিধানসভা নির্বাচনে সৌরভকে প্রার্থী তথা বঙ্গ বিজেপির মুখ হতে বলেছিল বিজেপি, কিন্তু সৌরভ রাজনীতির ময়দানে নামেননি। অন্যদিকে, বাংলায় বিপুল সাফল্য পায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। তখন থেকে বাংলার উপর প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণ শুরু করে মোদী সরকার।
শোনা যায় ২১ সালে প্রাক নির্বাচনী সময়ে অসুস্থতার কারণে সৌরভ মোদীর সভায় জাননি, সেই নাকি প্রথম সংঘাতের শুরু। অন্যদিকে, শোনা যায়, সৌরভ লাগাতার মোদী-শাহ শিবিরের রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে এসেছেন। আবার অন্য জল্পনাও রয়েছে, এই বিজেপিকেই নাকি লেজে খেলিয়ে তাদেরই সাহচর্যে BCCI-এর প্রেসিডেন্ট হয়েছেন সৌরভ। তবে কি ‘Give and Take’ নীতি অমান্য করতে নেমে এল শাস্তি? সে প্রশ্ন উঠেছে।
জল্পনায় উঠে আসছে, কয়েকমাস আগে বেহালার বাড়িতে এসে ডিনার টেবিলে সৌরভকে নাকি বিজেপিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেন শাহ। তাকে নাকি বলা হয় বাংলায় বিজেপি কর্মীদের ওপর সন্ত্রাস হচ্ছে এবং তাই নিয়ে সৌরভকে মুখ খুলতে হবে। কিন্তু তাও নাকচ করেন ‘বাঙালির দাদা’। সে চর্চাও চলছে নানা মহলে। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, বিজেপি বুঝে গিয়েছে সৌরভকে দিয়ে বাংলার মাটিতে রাজনৈতিক ফায়দা তোলা যাবে না। তাই কি কার্যত সৌরভকে শাস্তি দিতেই বিসিসিআইয়ের পদ কেড়ে নেওয়া হল? ক্রমশই জোরালো হচ্ছে সে প্রশ্ন।