অলক্ষ্মী নয়, আজ বিদায় হোক অন্তরে জমা নিকষ কালো আঁধারের
আজ দীপান্বিতা অমাবস্যা। দেবী কালিকার সঙ্গে আজ লক্ষ্মীরও আরাধনা হবে। অনেক জায়গায় আজ আরও একজন আরাধ্য হয়ে ওঠেন। কালীপুজোর পাশাপাশি সিংহাসনে বসেন দেবী অলক্ষ্মীও।
পুরাণ মতে, অলক্ষ্মী হল দেবী লক্ষ্মীর দিদি। এঁদের জন্মবৃত্তান্ত নিয়েও কিংবদন্তির অন্ত নেই। সমুদ্রমন্থনের সময় অমৃতের পাত্র নিয়ে জন্ম হয় দেবী লক্ষ্মীর, তার ঠিক আগেই জন্ম নেন অলক্ষ্মী। আবার কেউ কেউ বলেন, প্রজাপতি ব্রহ্মার মুখের আলো থেকে জন্ম নেন লক্ষ্মী; আর পিঠ থেকে অলক্ষ্মী। তবে অলক্ষ্মী সব দিকেই বোনের উল্টো মেরুতে অবস্থান করেন। পুরাণ ও শাস্ত্রে দেবী অলক্ষ্মীকে কুরূপা, ঈর্ষা ও দুর্ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে দেখিয়ে এসেছে।
অমঙ্গল ও অশুভের প্রতীক হলেও অলক্ষ্মী ভগবতীর আরেক রূপ। সকলের মধ্যেই সাদা এবং কালো; দুই রয়েছে। এক্ষেত্রেই তাই। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর সময় দেবী লক্ষ্মীর সঙ্গে হাজির হন অলক্ষ্মীও। আর কালী কালীপুজোর দিন তাকে পুজো করে বিদায় জানানো হয়। গোবর দিয়ে তৈরি করা হয় অলক্ষ্মীর মূর্তি; আগে তার আরাধনা করা হয়। পুজো হয়ে গেলে মেয়েরা অলক্ষ্মীর মূর্তিটি নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। বলেন ওঠেন ‘লক্ষ্মী আয়, অলক্ষ্মী যা’। ঘরের সব অশুভকে অলক্ষ্মীর বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গেই বাইরে রেখে আসেন গৃহিনীরা। থেকে যান লক্ষ্মী। কিন্তু শুধুই কী তাই? সমাজ, মানুষের মন যে কানায় কানায় পূর্ণ হয়েছে নানাবিধ অলক্ষ্মীতে…তার বিদায়ের কী হবে?
দীপান্বিতা অমাবস্যার চেয়েও নিকষ কালো যে আঁধারে আমাদের মন ডুবে রয়েছে, সেই অমানিশা তাড়ানো কি আমাদের কর্তব্য নয়? তাই আজ অলক্ষ্মী নয়, বিদায় নিক অন্তরের বিদ্বেষ, বৈষম্য। বাড়িতে সদ্য বিয়ে হয়ে আসা মেয়েটির উপর নাতির মুখ দেখার জন্যে মানসিক নির্যাতন চালানো বন্ধ হোক। সুস্থ সন্তান চান। অঞ্জলি দিতে দিতে বলুন সন্তানং দেহী। হিমা দাস, ঝুলনদের কথা ঘটা করে চায়ের আড্ডায় তুলে বা সমাজ মাধ্যমে পোস্ট করে নয়, নিজের বাড়ি থেকেও ঝুলন তৈরির উদ্যোগ নিন। বন্ধ হোক বিয়ে নামে ঘর ভর্তি জিনিস নেওয়ার রীতি। পণের জন্যে গৃহবধূর মৃত্যু, এই হেডলাইন যেন কোনও সাংবাদিককে লিখতে না হয়। নিজের মেয়ের মতোই শ্বশুরবাড়িতে আদর যত্ন পাক বৌমারা। শাড়ির বদলে সালোয়ার পরার অনুমতি মিলুক।
শিক্ষার অধিকার পাক সব লক্ষ্মীরা। সেও তো বংশধর। রাঁধা-বাড়া বা চুল বাঁধা নয়, রকেট চালাক অনেক কল্পনারা। নাইট ডিউটি করা সুস্মিতা, বিমলাদের দিকে বাঁকা নজরে দেখা বন্ধ হোক। মেয়ের গায়ের গয়না দেখে বাবার ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সের ছক কষা বন্ধ হোক। ডাইনি সন্দেহে পিটিয়ে মারার একটা খবরও যেন দেখতে না হয় আর।- এই কামনা থেকে হোক মনের অলক্ষ্মী বিদায়। বৈষম্যের তমসা ঘুচে যাক, মন থেকেও, সমাজ থেকেও। তবেই সার্থক হবে অলক্ষ্মী বিদায়।