মোদী-শাহর উপরে আস্থা হারিয়ে কাশ্মীর ছাড়ছেন পণ্ডিতরা
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছেন, কাশ্মীর-সহ দেশে সন্ত্রাসের সবচেয়ে বড় ক্ষেত্রগুলি গত আট বছরে সন্ত্রাসমুক্ত হয়েছে! দিল্লিতে জাতীয় পুলিশ স্মৃতি দিবস অনুষ্ঠানে কাশ্মীর প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, উপত্যকায় যে যুবকেরা আগে সেনাকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তেন, তাঁরা এখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে সরপঞ্চ বা পঞ্চায়েত সদস্য হয়ে এলাকার উন্নতিতে কাজ করছেন।
কেন্দ্রীয় সরকার তথ্য পরিসংখ্যান দিয়ে দাবি করছে, বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর জম্মু-কাশ্মীরে শান্তি ফিরেছে। অথচ প্রায়শই সংবাদের শিরোনামে দেখতে পাওয়া যায়, কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন পণ্ডিত সমাজের কোনও সদস্য। ক’দিন পর পরই উপত্যকায় টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হচ্ছে পণ্ডিত সম্প্রদায়ের মানুষ। টার্গেট করা হয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকদেরও। লাগাতার জঙ্গি সন্ত্রাসের মুখে কাশ্মীর ছেড়ে যাচ্ছে বহু পণ্ডিত পরিবার।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, গত সোমবার নয়টি কাশ্মীরি পণ্ডিত পরিবার উপত্যকার শোপিয়ান জেলা থেকে জম্মুতে চলে গিয়েছে। এমাসের ১৫ তারিখ শোপিয়ানে জঙ্গিদের হাতে একজন পণ্ডিত পরিবারের এক কৃষক নিহত হন। তারপর আতঙ্ক চরমে উঠেছে বলে জানা গিয়েছে।
সূত্রের খবর, জঙ্গিরা টার্গেট করায় গত কয়েক মাসে অন্তত ১৭টি পণ্ডিত পরিবার কাশ্মীর ছেড়েছে। কাশ্মীর পণ্ডিত সংগ্রাম সমিতির (কেপিএসএস) সভাপতি সঞ্জয় টিকু সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, উপত্যকা ছেড়ে যাওয়াদের মধ্যে এমন পরিবারও আছে যারা গত শতকে নয়ের দশকে ভয়ানক সন্ত্রাসের মুখেও মাটি কামড়ে থেকে গিয়েছিলেন। হালে চলে যাওয়া অনেক পরিবারের ক্ষেতে আপেল পড়ে আছে। অনেকে তা প্যাকেট বন্দি করার পরও বিক্রির অপেক্ষায় না থেকে চলে গিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত শতকের নয়ের দশকের গোড়ায় সন্ত্রাসের মুখে দলে দলে পণ্ডিত সম্প্রদায়ের মানুষ কাশ্মীর ছেড়ে যায়। তখনও আটশোটির মতো পরিবার সরকারি আশ্বাসে ভরসা রেখে থেকে গিয়েছিল। নরেন্দ্র মোদীর সরকার ক্ষমতায় আসার পর নতুন করে অশান্তি শুরু হয় জম্মু-কাশ্মীরে বিজেপি ও পিডিপি’র জোট সরকার ভেঙে যাওয়ায়। সেই থেকে উপত্যকায় রাষ্ট্রপতি শাসন চলছে। এরই মধ্যে ২০১৯-এর ৫ অগাস্ট মোদী সরকার সংবিধানে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল করে দেয়। তারপর জঙ্গি তৎপরতা আরও বাড়তে থাকে।
জম্মু-কাশ্মীরে বড় মাপের জঙ্গি হামলা আগের চেয়ে কমলেও কিছু দিন অন্তরই উপত্যকায় বেছে বেছে স্থানীয় পণ্ডিত ও শিখ সমাজের ব্যক্তিদের উপরে হামলা চালিয়ে অস্থিরতা তৈরি করে রেখেছে পাকিস্তানের মদতে পুষ্ট জঙ্গিরা। জঙ্গিদের নিশানার শিকার হয়েছেন ভিন রাজ্যের শ্রমিকেরাও। ফলে অমিত শাহ উপত্যকায় শান্তি ফেরার দাবি করলেও, বস্তুত কী ভাবে ওই ‘ব্যক্তিহত্যা’ বন্ধ করা সম্ভব সে বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন যে কার্যত দিশাহীন তা ঘরোয়া ভাবে মেনে নিচ্ছেন স্বরাষ্ট্র কর্তারাও। তা ছাড়া কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের সময় থেকেই উপত্যকাকে নিরাপত্তাবাহিনী দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে। সেই বাহিনী প্রত্যাহার করে নিলে পরিস্থিতি কেমন দাঁড়াবে তা নিয়েও সরকারের অন্দরমহলেই প্রশ্ন রয়েছে।