নোটবন্দির ৬ বছর পার, সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে এখনও প্রশ্নের মুখে মোদী সরকার
২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর রাত আটটায় ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটকে বাতিল ঘোষণা করেছিলেন মোদী। আম জনতার জীবনে নেমে এসেছিল চরম দুর্ভোগ। ক্রমেই বেড়েছে ভোগান্তি। অর্থনীতিবিদরা বলেন, আজও নোটবন্দির মতো তুঘলকি সিদ্ধান্তের মূল্য দিতে হচ্ছে ভারতীয় অর্থনীতিকে। বিরোধীদের মধ্যে মোদীর নোটবন্দির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রথম সরব হয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওইদিন নোটবন্দির ঘোষণার দু-ঘন্টা পর রাত ১০ টা ১৯ নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটে লেখেন, ‘WITHDRAW THIS DRACONIAN DECISION’ । তারপর পেরিয়ে গিয়েছে ৬ বছর। মোদী সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে মামলা আজ উঠতে চলেছে আদালতে।
নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত সঠিক না ভুল তার উত্তর আজও মেলেনি। মোদী সরকারের দাবি নোট বাতিল সফল। বিরোধীরা বলেছে নোট বাতিল ভ্রান্ত পদক্ষেপ বই কিছুই নয়। বিরোধীদের অভিযোগ নোটবন্দি দেশের অর্থনীতিকে আঁধারে ঠেলে দিয়েছে। আজও নোট বাতিলের লাভ-ক্ষতি নিয়ে কোনও ব্যাখ্যা মেলেনি মোদী সরকারের তরফে। অন্যদিকে, দেশের শীর্ষ আদালতে নোট বাতিলের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দায়ের হওয়া মামলার শুনানি চলছে। বিচারপতি আব্দুল নাজিরের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে আজ, বুধবার ওই মামলার শুনানি হবে।
ছয় বছর আগে নোট বাতিলের কারণে নাজেহাল হতে হয়েছিল সাধারণ মানুষকে, ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাও চরম সংকটে পড়ে। ব্যাঙ্ক ও এটিএমের বাইরে লম্বা লাইন পড়ে যায়। ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর সংসদে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় জানান, নোটবন্দির কারণে ব্যাঙ্ক ও এটিএমের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে ১০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।
স্পষ্টত মোদী সরকারের সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়। মোদী সরকার ক্রমাগত দাবি করে, এতে দুর্নীতি, কালো টাকা কমবে, অর্থনীতির উন্নতি হবে। যদিও বাস্তবে তা হয়নি, অন্যদিকে ওই দাবির সমর্থনে উপযুক্ত তথ্য পেশ করতে পারেনি মোদী সরকার। নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বেশ কিছু সংগঠন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়। ২০১৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর মামলাটি সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠানো হয়।
নোটবাতিলের সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে প্রশ্নের মুখোমুখি মোদী সরকার এবং ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। বিচারপতি এস আবদুল নাজির, বি আর গাভাই, এ এস বোপান্না, ভি রামসুব্রহ্মণ্যম, এবং বি ভি নাগারত্নকে নিয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ সাংবিধানিক বেঞ্চে শুনানি চলছে।
১২ অক্টোবর,২০২২-এ পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়েছে, নোটবাতিলের বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং তারা তা খতিয়ে দেখবেন। ডিমনেটাইজেশনের সিদ্ধান্ত আইনতভাবে কতটা বৈধ তা হলফনামা দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে জানাতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। কোন কোন নথিপত্রের ভিত্তিতে নোটবাতিল করা হয়েছে, তাও রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে পেশ করতেও বলা হয়েছে। দেশের শীর্ষ আদালতের এই ভূমিকায় অস্বস্তিতে মোদী সরকার। এই বিষয়ে শুনানিকে সময় নষ্ট বলেও মোদী সরকার আখ্যায়িত করলেও দেশের শীর্ষ আদালত তাতে খুব একটা পাত্তা দেয়নি।
শুনানি চলাকালীন মোদী সরকারের তরফে অ্যাটর্নি জেনারেল আর বেঙ্কটরামানি ও সলিটিসটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, এহেন ব্যক্তিগত সমস্যা প্রশাসনিকভাবে যাচাই করা যায়। কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চের সময় নষ্ট করার কোনও মানে নেই। জবাবে মামলাকারী পক্ষের আইনজীবী শ্যাম দিওয়ান জানান, এহেন গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপকে সরকারপক্ষ সময় নষ্ট বলেছে, দেখে তারা অবাক হচ্ছেন। আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী পি চিদম্বরম জানান, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া আইনের ২৬ ও ২৬ (২) নম্বর ধারা অনুযায়ী, কেন্দ্র কিছু সিরিজের নোট বাতিল করতে পারে। কিন্তু একটি মাত্র নির্দেশেই ৫০০ এবং এক হাজার টাকার সমস্ত নোট বাতিল করার মতো কোনও আইনি অধিকার কেন্দ্রের নেই। নিয়ম অনুযায়ী, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত রিজার্ভ ব্যাঙ্কই চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারই সর্বেসরবার ভূমিকা নিয়েছিল।
এরপরই আদালত কেন্দ্রের কাছে ধারা ২৬ (২)অনুযায়ী সুপারিশ দেখতে চেয়েছে। সুপারিশের ভিত্তিতে কী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক? কেন্দ্রীয় সরকারের কী উত্তর ছিল, সেই সংক্রান্ত নথি দেখতে চেয়েছেন বিচারপতি। নোটবাতিলের সিদ্ধান্তে সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী ছিল? তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। ৯ নভেম্বর মামলাগুলির পরবর্তী শুনানি হবে।