গাফিলতিতেই মোরবির সেতু বিপর্যয়, ভূপেন্দ্র প্যাটেল সরকারকে ভর্ৎসনা গুজরাত হাইকোর্টের
মোরবির সেতু বিপর্যয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। সরকারি মতে সংখ্যাটা ১৩৫, সেতু বিপর্যয়ে এত মানুষের মৃত্যুর দায় কার্যত গুজরাত সরকারের কাঁধেই চাপাল গুজরাত হাইকোর্ট। দুর্ঘটনার প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে মঙ্গলবার গুজরাতের উচ্চ আদালত সাফ জানিয়েছে, গুজরাতের বিজেপি সরকারের গাফিলতিতেই এমন ঘটনা ঘটেছে।
এজলাসে গুজরাতের মুখ্যসচিবকে দাঁড় করিয়েই ভর্ৎসনা করেছেন প্রধান বিচারপতি অরবিন্দ কুমার এবং বিচারপতি আশুতোষ জে শাস্ত্রীর বেঞ্চ। নোটিস পাঠানো সত্ত্বেও মোরবি পুরসভার কোনও আধিকারিক শুনানিতে হাজির হননি। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ দুই বিচারপতির বেঞ্চের কটাক্ষ, মোরবি পুরসভা অতিচালাকি করছে। পুরবোর্ডের মুখ্য আধিকারিকের বিরুদ্ধে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হল না, সেই মর্মে গুজরাত সরকারের কাছে নথি তলবও করেছে দুই বিচারপতির বেঞ্চ।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ অক্টোবর গুজরাতে সেতু ভেঙে পড়ে। তারপর পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ভূপেন্দ্র প্যাটেল সরকার। যদিও সেতু সংস্কারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওরেভা গোষ্ঠীর একজন কর্মী ছাড়া কেউই গ্রেপ্তার হননি। সংস্থার শীর্ষ কর্তারা দিব্যি আছেন। কোনও সরকারি আধিকারিককেও দায়ী কর হয়নি। কার্যত বাধ্য হয়েই স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করে গুজরাত হাইকোর্ট। দুর্ঘটনা নিয়ে রাজ্যের ছয় দপ্তরের জবাব তলব করা হয়। তারই শুনানিতে মঙ্গলবার গুজরাতের বিজেপি সরকার ও মোরবি পুরসভাকে ভর্ৎসনা করে হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, পুরসভার গাফিলতির জন্যেই ১৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। কেন টেন্ডার ডাকা হয়নি? মাত্র দেড় পাতায় কেন চুক্তি সেরে ফেলা হয়েছে? ইত্যাদি প্রশ্ন তুলেছে হাইকোর্ট। সেতু খুলে দেওয়ার আগে ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়া নিয়ে চুক্তিপত্র ছিল কি না, আধিকারিকদের তা জানাতে বলেছে আদালত। বিচারপতিদের বেঞ্চের কটাক্ষ, টেন্ডার না ডেকে সরকার যেন উপঢৌকন পাইয়ে দিয়েছে। এরপরই মুখ্যসচিবের উদ্দেশ্যে বিচারপতিরা প্রশ্ন করেন, টেন্ডার না ডেকে অজন্তা-ওরেভা কোম্পানিকে কি সরকারের অর্থ পাইয়ে দেওয়া হয়েছে? চুক্তির প্রথম দিন থেকে যাবতীয় নথি জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। রাজ্য সরকারের হলফনামা নিয়েও সন্তুষ্ট নয় আদালত। মামলার তদারকির জন্য মোরবির প্রিন্সিপাল জাজকে একজন আধিকারিক নিয়োগ করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
তদন্ত কমিটির তদন্ত কোন পথে এগচ্ছে তার উপর নজরদারি চালাচ্ছে গুজরাতের মানবাধিকার কমিশনও। তারা আদালতকে জানায়, চেয়ারপার্সন এবং এক সদস্য সেতু বিপর্যয়ের তদন্ত করছে। কতটা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে, সেই ক্ষতিপূরণ যথাসময়ে সেতু দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কাছে পৌঁছেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফলে ভোটের মুখে অস্বস্তিতে গুজরাত বিজেপি।