সবার অলক্ষ্যে মারাদোনা যেন চিৎকার করে চলেছেন-ভামোস আর্জেন্টিনা, ভামোস মেসি
মঙ্গলবার ২২শে নভেম্বর আর্জেন্টিনাকে ২–১ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপে অঘটন ঘটিয়ে দিয়েছিল সৌদি আরব (Saudi Arabia)। হতাশ আর্জেন্টিনার সমর্থকরা। কারণ তাঁরা যে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে খেলা দেখছিলেন। প্রথম ম্যাচেই মেসিরা যে এভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে তা বোধ হয় তাঁরা কেউ কল্পনাতেও আনেন নি।
তবে একজন মনে হয় ম্যাচ শেষে চিৎকার করে বলে চলেছেন- ভামোস আর্জেন্টিনা, ভামোস মেসি…..। কারণ, তাঁর নেতৃত্বেই ১৯৯০ সালে ট্রফিজয়ের দাবিদার হিসাবে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু সে বার ক্যামেরুনের কাছে প্রথম ম্যাচে ০-১ গোলে হারে আর্জেন্টিনা। সেই হারের ধাক্কা সামলে তাঁর নেতৃত্বে একের পর এক শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। ফলে মেসিদের এবং আর্জেন্টিনার সমর্থকদের এখনই হতাশ হওয়ার দরকার নেই।
এবারের বিশ্বকাপে এমনিতেই তাঁর জন্য আর্জেন্টিনা (Argentina) সমর্থকদের মন খারাপ! কাতার বিশ্বকাপেরই (Qatar World Cup 2022) মন খারাপ। প্রতিমুহূর্তে যেন তাঁর অনুভূত হচ্ছে। ঠিকই ধরছেন। প্রয়াত ফুটবলের রাজপুত্র দিয়েগো মারাদোনার কথাই বলছি।
রাশিয়া বিশ্বকাপের কথা মনে আছে? নাইজেরিয়ার বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে আর্জেন্টিনার গোলের পর গ্যালারিতে কী বুনো উল্লাসটাই না করেছিলেন! এই বিশ্বকাপেও কি এমন কিছুই করতেন? এই প্রশ্নের উত্তর আর জানা যাবে না।
না ফেরার দেশে চলে যাওয়ায় মেসির গোলে ’৮৬ বিশ্বকাপ কিংবদন্তিকে স্টেডিয়ামে আর বুনো উল্লাস করতে দেখা যাবে না। তবে মারাদোনা যেখানেই থাকুক না কেন, তিনি তো আর্জেন্টিনা দলের সঙ্গেই থাকবেন।
আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসিও (Lionel Messi) ঠিক এটাই বিশ্বাস করেন। ফিফাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেসি বলেন, মারাদোনা তাঁদের সঙ্গেই আছেন। ‘গ্যালারিতে তাঁকে না দেখাটা হবে অদ্ভুত অনুভূতি। তাঁকে দেখে দর্শকদের উন্মাদনাও দেখা যাবে না। আসলে মারাদোনা না থাকায় অনেকটাই অন্যরকম লাগবে। তবে আর্জেন্টিনাকে তিনি ভালবাসতেন। সব সময়ই দলের পাশে থেকেছেন। যেখানেই থাকুক না কেন, তিনি দলের সঙ্গেই থাকবেন।’
১৯৮৬ থেকে ২০২২। ১৯৮৬ সালে ডিয়েগো মারাদোনার (Diego Maradona) জাদুকরী পারফরম্যান্সে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরেছিল আর্জেন্টিনা। তার পর শুধু অপেক্ষা। দীর্ঘ ৩৬ বছরে ৮ টি বিশ্বকাপ খেলেছে। যার চারটি খেলেছেন ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসি। ক্লাব ফুটবলে ম্যাচের পর ম্যাচ চোখ ধাঁধানো ফুটবল খেলে গেলেও বিশ্বকাপে জাতীয় দলে তাকে নিয়ে আছে হাহাকার! নিজের শেষ বিশ্বকাপে এসে মরুর বুকে ফুল ফোটাতে পারবেন তো মেসি? নাকি ২০১৪ বিশ্বকাপের মতো হাহাকার নিয়ে প্রস্থান ঘটবে! সময়ই সে কথা বলবে।
জার্মানির বদলি প্লেয়ার মারিও গোটজের দারুণ এক গোলেই লেখা হয়েছে বেদনার করুণ ইতিহাস। সেই কষ্ট, সেই শোকবিহ্বল মেসির ছবি এখনো আর্জেন্টিনা ভক্তদের কাঁদায়। মারাদোনাও শিশুদের মতো কেঁদেছিলেন।
মেসিরা নিশ্চয়ই জানেন অজানা কোনও স্থান থেকে তাঁদের খেলা দেখছেন মারাদোনা এবং চিৎকার করে বলছেন- ভামোস আর্জেন্টিনা, ভামোস মেসি…..।