জন্মভূমি ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে গোল দিয়ে সুইজারল্যান্ডকে জেতালেন ব্রিল এমবোলো
আল জানোব স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ‘জি’ গ্রুপের সুইজারল্যান্ড মুখোমুখি হয় ক্যামেরুনের। এই ম্যাচে সুইজারল্যান্ড ১-০ গোলে ক্যামেরুনকে পরাজিত করল।
সুইজারল্যান্ড–ক্যামেরুন ম্যাচটি ব্রিল এমবোলোর জন্য একটু অন্যরকমই ছিল। সুইজারল্যান্ডের অন্যতম সেরা ফরোয়ার্ড এমবোলোকে যে খেলতে হয়েছে তাঁর জন্মভূমির বিপক্ষে। শুধু যে খেলতেই হয়েছে, তা নয়। আজ ক্যামেরুনের বিপক্ষে সুইজারল্যান্ডের জয়ের নায়কও এমবোলোই। তাঁর একমাত্র গোলেই যে ক্যামেরুনকে ১–০ গোলে হারিয়েছে সুইসরা।
গোলের পর তার অন্য সতীর্থরা যখন উল্লাস করছেন। তখন এমবোলো স্থির দাঁড়িয়ে রইলেন, দুই হাত ওপরে তুলে ক্ষমা চাওয়ার মতো ভঙ্গি করলেন, দুই হাত জোড় করে গ্যালারির দিকে তাকালেন।
১৯৯৭ সালে ক্যামেরুনের রাজধানী ইওয়ান্দেতে জন্ম এমবোলোর। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর সেখান থেকে ৫ বছর বয়সী ছেলে এমবোলোকে নিয়ে ফ্রান্সে পাড়ি জমায় তার মা। পৃথিবীর অন্যতম জাঁকজমকপূর্ণ দেশটিতেও থিতু হতে পারেননি এমবোলোর মা। পরের বছরই এমবোলোদের ঠাঁই হয় সুইজারল্যান্ড (Switzerland)। বাসেলে বসতি গাড়েন এমবোলোর মা। সেখানেই ফুটবলে ‘পায়েখড়ি’!
ব্রাজিল, সুইজারল্যান্ড, সার্বিয়াকে নিয়ে গড়া কঠিন গ্রুপে (‘জি’) তারা আন্ডারডগই। শীর্ষ র্যাঙ্কধারীদের দলে ক্যামেরুনের (Cameroon) সবার নীচে- ৪৩তম। সেরা সাফল্যও বলতে ১৯৯০ সালের কোয়ার্টার ফাইনাল। সেই শক্তি-সামর্থ্য এখন আর নেই যদিও। কোনও রকমে অষ্টম বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে পারা দলটা টুর্নামেন্টের সর্বশেষ ম্যাচও জিতেছে ২০০২ আসরে! অঘটনের বিশ্বকাপে ক্যামেরুনও চাইছিল সৌদি আরব-জাপানের মতো অবিশ্বাস্য কিছু করে দেখাতে। দলটির কোচ ও প্রাক্তন অধিনায়ক রিগোবার্ট সং ম্যাচ শুরুর আগে তাই বলেছিলেন- ‘বিশ্বকাপে আমরা বেশ কিছু চমক দেখেছি। আমারও আমাদের প্রতিপক্ষকে সম্মান দেই। তবে মাঠেই প্রমাণটা মেলে কে বেশি শক্তিশালী।’
তবে শেষ পর্যন্ত ‘অবিশ্বাস্য’ কিছু ঘটল না। সুইজারল্যান্ডের কাছে ১-০ গোলে হারতে হল ক্যামেরুনকে।
প্রথমার্ধের খেলা শেষ হয় গোলশূন্য ভাবে। অনেকটা খেলার ধারার বিপরীতে দশম মিনিটে প্রথম সুযোগ পেয়েছিল ক্যামেরুন। ডি-বক্সের মাঝখানে অপেক্ষায় ছিলেন এরিক ম্যাক্সিম চুপো-মটিং। তবে তাকে বল না দিয়ে দুরূহ কোণ থেকে শট নেন ব্রায়ান এমবিউমো। লক্ষ্যে রাখতে পারেননি তিনি, বল বেরিয়ে যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে।
প্রতি-আক্রমণ থেকে ত্রিশ মিনিটে আরেকটি ভালো সুযোগ পায় ক্যামেরুন। মার্টিন হঙ্গলার ক্রস ঠিক মতো ফেরাতে পারেননি সুইজারল্যান্ড গোলরক্ষক। তার হাত থেকে ফস্কে যাওয়া বলে বিপদ হতে পারত। কিন্তু তৎপর ছিলেন না কার্ল টোকো একাম্বি। বিপদমুক্ত করেন ডিফেন্ডার সিলভান উইডমার।
পাঁচ মিনিট পর আবার ত্রাতা তিনি। ক্রসে দুর্দান্ত স্লাইডে একাম্বিকে বলের নাগাল পেতে দেননি মাইন্সের এই ডিফেন্ডার। ব্যর্থ হয় ক্যামেরুনের দারুণ একটি আক্রমণ।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে সুইজারল্যান্ডকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেন মানুয়েল আকনজি। কর্নার থেকে একটুর জন্য হেড দূরের পোস্ট দিয়ে লক্ষ্যে রাখতে পারেননি ম্যানচেস্টার সিটির এই ডিফেন্ডার।
দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরুর অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই ডান দিক থেকে জেরদান শাচিরি পাস দিলেন ছয় গজ বক্সের সামনে। অরক্ষিত ব্রিল এমবোলো ডান পায়ের শটে সহজেই বল পাঠালেন ক্যামেরুনের জালে। সেই গোল আর শোধ করতে পারেনি ক্যামেরুন।