ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধেও কি সবুজ গালিচায় গোলের আলপনা আঁকবেন এমবাপে!
শনিবার রাতে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হবে ঐতিহাসিকভাবে ‘চির শত্রু’ দুটি দেশ- ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ড। শতবর্ষী ব্যাপী যুদ্ধের কথা তাদের ভুলে যাওয়ার কথা নয়। ফলে তারা যখন কোয়ার্টার ফাইনালে মাঠে নামবে, তখন আরেকটি ময়দানী যুদ্ধের প্রতিশ্রুতিই মেলার কথা।
বিশ্বকাপে সর্বশেষ ১৯৮২ সালে গ্রুপ পর্বে এই দুটি দল মুখোমুখি হয়েছিল। কিন্তু নকআউট পর্বে এই প্রথম লড়াই হচ্ছে দুই দলের।
সব মিলে জমজমাট একটা লড়াই যে হবে তাতে সন্দেহ নেই। ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশমও তা মানেন। তবে এই ইংল্যান্ডের প্রতি আক্রমণ, সেট পিসকে নিয়েই ভয় ফরাসি কোচের, ‘গতি ওদের অন্যতম একটা অস্ত্র। সেক্ষেত্রে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার সময়টা কম থাকে। আর গোল করার জন্য এই গতিই প্রয়োজন। ওদের অর্ধেকের বেশি গোলই এসেছে প্রতি আক্রমণ থেকে। অন্যান্য গুণও আছে তাদের। কৌলগত জায়গায় সক্ষমতা সহ সেট পিস থেকে গোল করার সামর্থ্য রয়েছে।’
এই ম্যাচে সকলের নজর থাকবে কিলিয়ান এমবাপের দিকে। ঠোঁটে সব সময় স্মিত একটা হাসি লেগে থাকে। এই হাসির যে কোনো বিশেষত্ব আছে, তা নয়। ২৩ বছর বয়সী আরও অনেক উচ্ছল যুবকের হাসির মতোই সে হাসি। পা জোড়াও তাঁর আর পাঁচজন তরুণের মতোই।
কিন্তু এমবাপ্পের ওই পা দুটিই বিশেষ হয়ে ওঠে মাঠে নামলে। কখনো সেগুলো শিল্পীর তুলির মতো। সবুজ গালিচায় আলপনা আঁকে সবুজ মনে। মাঝমাঠে বল পেলে এমবাপের পা দুটি যেন হয়ে যায় উসাইন বোল্টের। গতির ঝড়ে তিনি এলোমেলো করে দেন প্রতিপক্ষের মাঝমাঠ আর রক্ষণ। আর প্রতিপক্ষের বক্সে বল পেলে তাঁর পা জোড়া হয়ে ওঠে খাপখোলা তলোয়ার! প্রতিপক্ষের রক্ষণকে কেটেকুটে মেতে ওঠেন গোলের আনন্দে!
মঞ্চ যখন বিশ্বকাপ, তখন যেন আরও ভয়ংকর এমবাপে। সময়ের চাকাটা চার বছর পেছনে ঘুরিয়ে ২০১৮ বিশ্বকাপের দিকে তাকালেই এটা স্পষ্ট হবে।
কাজান থেকে নিঝনি নভগোরোদ, সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামের সবুজ গালিচায় একের পর এক জাদু দেখিয়ে গেছেন। জাদুকর যেমন মঞ্চে তাঁর প্যান্ডোরার বাক্স থেকে একের পর এক জাদুর ঝলক বের করে আনেন, এমবাপেও ২০১৮ বিশ্বকাপের একেকটা মঞ্চে সেভাবেই তাঁর অফুরন্ত প্রতিভার ভান্ডার থেকে বের করে এনেছেন একেকটি জাদুর ঝলক!
এমবাপে এবার কাতারে এসেছেন তারা থেকে মহাতারা হতে। দুটি বিশ্বকাপ জিতে আরও একবার পেলের পাশে নাম লিখিয়ে ফুটবলের ইতিহাসে অমরত্ব পেতে। অমরত্ব পাওয়ার সেই মোহন বাঁশি তিনি এবারও বাজিয়ে যাচ্ছেন ফ্রান্সের প্রথম ম্যাচ থেকেই।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফ্রান্সের ৪-১ ব্যবধানে তাঁর গোল একটি। পরের ম্যাচে তাঁর জোড়া গোলে ডেনমার্ককে ২-১ ব্যবধানে হারায় ফ্রান্স। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে গোল পাননি, কিন্তু শেষ ষোলোতে পোল্যান্ডকে হারাতে আবার জোড়া গোল করলেন এমবাপে। সব মিলিয়ে ৫ গোল করে সোনার জুতা জয়ের পথে অনেকটাই এগিয়ে তিনি।
কিন্তু শুধু সোনার জুতা জিতলেই তো আর অমরত্ব পাওয়া যায় না! তাই তো বিশ্ব জয়ের স্মারক সোনালি ট্রফিটায় আবার চুমু আঁকতে হবে এমবাপেকে। সেই পথে তাঁর সামনে আর তিনটি বাধা। সেই তিন বাধার প্রথমটি কোয়ার্টার ফাইনালে আজ তিনি মুখোমুখি হবেন ইংল্যান্ডের। আজ কী আঁকবেন তিনি—ঠোঁটের চওড়া হাসি নাকি নেইমারের মতো হতাশার করুণ ছবি! আর কিছুক্ষনের অপেক্ষা, তারপরই মিলে যাবে এই প্রশ্নের জবাব!