পেলে এক স্বপ্ন উড়ানের নাম
![](https://drishtibhongi.in/wp-content/uploads/2022/12/Picsart_22-12-30_07-16-14-399-1-1024x769.jpg)
চলে গেলেন পেলে, তিনি আর ফুটবল আজ সমার্থক। তিন তিনটি বিশ্বকাপ তাঁর! এ নজির আর কারও নেই। কথিত আছে, ব্রাজিলের ছেলেরা প্রথম উপহার হিসেবে ফুটবল পায়। পেলের জীবনও ব্যতিক্রম ছিল না। ব্রাজিলের মিনাস জেরাইসে জন্ম পেলের। বাবা ছিলেন ব্রাজিলের ক্লাব ফ্লুমিনেন্সের ফুটবলার ডোনডিনহো। বিজ্ঞানী টমাস এডিসনের নামানুসারে ছেলের নাম দেন এডসন, পুরো নাম এডসন আরান্তেস দি নাসিমেন্তো। ডাকনাম ডিকো। পেলের ছোটবেলা কেটেছে চরম দারিদ্রের মধ্যে। ফুটবলের প্রতি ছোট থেকেই ঝোঁক ছিল পেলের। পড়াশোনা বেশি দূর করতে পারেননি। চায়ের দোকানে কাজ আর বাকি সময় রাস্তাতেই কাটত, ফুটবল খেলে। মোজার ভিতর কাগজ ভরে, বেঁধে, চলত খেলা। স্থানীয় বাউরু এলাকায় খেপ খেলতেন তিনি। ফুটসলও খেলেছেন পেলে।
ওয়ালদেমার দে ব্রিটোর নজরে পড়ে যান, ক্লাব স্যান্টোসে জায়গা হয়। ১৯৫৬ সালের জুনে প্রথম পেশাদার চুক্তি করেন পেলে। ঘুরে যায় জীবনের মোড়। স্যান্টোসের কোচ লুলাও পেলের খেলা দেখে মুগ্ধ হন। প্রথম মরশুমেই লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। এক বছরের মধ্যে জাতীয় দলে সুযোগ। ১৯৫৮-র বিশ্বকাপ। হাঁটুর চোট নিয়ে সুইডেনে এসেছিলেন জীবনের প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে। প্রথম ম্যাচে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে একটি অ্যাসিস্ট করেন। কম বয়সী ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপে খেলার নজির গড়েন পেলে। সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করেন।
১৯৬২ বিশ্বকাপে পেলে ছিলেন তারকা, বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার। চেকোশ্লোভাকিয়ার বিরুদ্ধে দূরপাল্লার একটি শট মারতে গিয়ে চোট পান সম্রাট। বিশ্বকাপ থেকেই ছিটকে যান। যদিও বিশ্বকাপ জিতেছিল ব্রাজিল। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নেয় সেলেকাওরা। প্রথম ম্যাচে বুলগেরিয়ার খেলোয়াড়রা পেলেকে প্রচুর ফাউল করেন। গোটা বিশ্বকাপজুড়েই তা হয়েছিল। পর্তুগালের বিরুদ্ধে জোয়াও মোরাইস জঘন্যভাবে পেলেকে ফাউল করেন।
পেলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, আর বিশ্বকাপ খেলবেন না। তবে অনুরাগী-সতীর্থদের অনুরোধে সিদ্ধান্ত বদলান। ১৯৭০ বিশ্বকাপ ছিল পেলের জীবনে শেষ এবং সেরা বিশ্বকাপ। ফাইনালে ইটালিকে ৪-১ ব্যবধানে হারিয়ে দেয় ব্রাজিল। পেলেই বিশ্বের একমাত্র ফুটবলার যাঁর তিনটে বিশ্বকাপ জয়ের নজির রয়েছে। ক্লাব ফুটবলে কোনও দিনও ব্রাজিল ছাড়েননি পেলে। রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাস, ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড, ইন্টার মিলানসহ একাধিক ক্লাব বিপুল টাকার প্রস্তাব দিলেও, দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও ক্লাব ফুটবল খেলতে যাননি পেলে। স্যান্টোসে ৪৯৩ ম্যাচে করেছিলেন ৫০১টি গোল।
নিউ ইয়র্ক কসমসে যোগ দেন। কসমসের হয়েই মোহনবাগানের বিরুদ্ধে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে প্রথম বার কলকাতায় আসা পেলের। সেই ম্যাচ ২-২ ড্র হয়েছিল। ২০১৬ সালে সুব্রত কাপের অনুষ্ঠানের জন্য ফের কলকাতায় এসেছিলেন। ফুটবল ছাড়ার পর ইউনেস্কোর গুডউইল অ্যাম্বাসাডর হিসেবে বিভিন্ন দেশে গিয়ে ফুটবলের প্রসারে বহু কাজ করেছেন তিনি। প্রত্যক্ষ রাজনীতি না করলেও ব্রাজিলের রাজনীতিতে একসময় সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। শারীরিক অসুস্থতার সঙ্গে বহুদিন লড়াই করলেন। শেষ পর্যন্ত হার মানতেই হল সম্রাটকে।