জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ নিয়ে নাজেহাল মোদী সরকার, ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয়দের
কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কাশ্মীর নীতি নিয়ে ইতিমধ্যেই নানান প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। নতুন বছরের শুরুতেই প্রশ্নের মুখে অমিত শাহের নেতৃত্বাধীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ভূমিকা। জম্মুতে বেছে বেছে হিন্দুদের হত্যা আটকাতে ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্নের মুখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
সম্প্রতি কাশ্মীরে হিন্দু পণ্ডিত ও শিখেদের বেছে বেছে হত্যার একাধিক ঘটনার সাক্ষী থেকেছে দেশ। এ বার উপত্যকার সীমা পেরিয়ে হিন্দু অধ্যুষিত জম্মুর রাজৌরি এলাকায় হামলা চালাল জঙ্গিরা। নতুন বছররে একদম শুরুতে জঙ্গিরা রাজৌরির ডাংরি এলাকায় একটি বাড়ি লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি চালালে মৃত্যু হয় পাঁচ জনের।
ফলে কাশ্মীর তো বটেই, জম্মুও যে আর পণ্ডিতরা নিরাপদ নয় তা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আতশকাচের সামনে গোয়েন্দা বাহিনীর ভূমিকাও। বিরোধীদের মতে, জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পরে কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার ইতি ঘটবে বলে সংসদে দাবি করেছিলেন অমিত শাহ। তা তো হয়নি, উল্টে জঙ্গিরা উপত্যকার সীমা ছাড়িয়ে এখন জম্মুতে হামলা চালাচ্ছে।
এরই মধ্যে বাড়তি মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে লাদাখ। বৌদ্ধ ও শিয়া মুসলিম অধ্যুষিত এই নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জন্য গড়া কেন্দ্রীয় কমিটিতে যোগ দিতে অস্বীকার করেছেন লাদাখের সর্বদলীয় নেতারা।
শুধু তা-ই নয়, লাদাখের নেতারা এখন প্রকাশ্যে বলছেন, অবিভক্ত জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যে তাঁরা অনেক বেশি ভালো ছিলেন। বিজেপি সরকার তাঁদের ঠকিয়েছে, বোকা বানাচ্ছে।
জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য ভেঙে কয়েক বছর আগে জম্মু-কাশ্মীর (Jammu and Kashmir) ও লাদাখ (Ladakh) নামে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা হয়। সেখানে নতুন করে সমস্যা মাথাচাড়া দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও (Narendra Modi) চিন্তিত। কারণ, জি-২০ গোষ্ঠীর সভাপতিত্ব পাওয়ার পর দেশের যেসব জায়গায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করতে চাইছেন, সেগুলোর একটি শ্রীনগরে হবে বলে স্থির করা হয়েছে। আগামী মে মাসে ওই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য দ্বিখণ্ডিত করার সময় কেন্দ্রীয় সরকার লাদাখ অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হচ্ছে না বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। তাঁদের মতে, সাড়ে তিন বছর ধরে তাঁদের সব বিষয়ে শুধু আশ্বাসই দেওয়া হচ্ছে।
এ অবস্থায় লাদাখের বৈশিষ্ট্য ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় ৭ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে। কিন্তু লাদাখের জনগণের প্রতিনিধিরা এতে যোগ দিতে অস্বীকার করেন। লাদাখ ও কারগিল ডেমোক্রেটিক জোটের নেতারা সর্বসম্মতভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, এই সরকার জনতাকে ধোঁকা দিয়েছে। তাঁরা আগের আমলে বরং অনেক ভালো ছিলেন।
কমিটি গঠনের পরদিনই বৌদ্ধ সংগঠন ও স্বশাসিত পরিষদের নেতা চেরিং দোর্জে বলেন, ‘আমরা বারবার বলে আসছি, আমাদের স্বতন্ত্র রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হোক এবং লাদাখের জনগণকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্ত করা হোক।’
চেরিং দোর্জে আরও বলেন, ‘সরকার এ দুটি বিষয়ে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আসছে। ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় না এনে আমাদের জমি, সংস্কৃতি, ভাষা ও চাকরি রক্ষা সম্ভব নয়। সরকার আমাদের বোকা বানাচ্ছে।’ উল্লেখ্য, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় চার রাজ্য—আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামের উপজাতি এলাকাগুলো সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের আওতায়। ওই এলাকাগুলো স্বশাসিত। লাদাখ দুটি অঞ্চল নিয়ে গঠিত—কারগিল ও লাদাখ। লাদাখে বৌদ্ধরা সংখ্যাগরিষ্ঠ আর কারগিলে মুসলিমরা। কারগিলের মুসলিমদের ৯৮ শতাংশ শিয়া। ডেমোক্রেটিক জোটের শিয়া নেতা সাজ্জাদ হুসেন বলেছেন, বৌদ্ধদের সঙ্গে তাঁরাও একমত। লাদাখকে পৃথক রাজ্য ও ষষ্ঠ তফসিলভুক্ত না করা পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন জারি থাকবে।
এই জোড়া অশান্তি নতুন বছরে কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য এখন নতুন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।