রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

শতাব্দী প্রাচীন ছাইতনতলা টাঙন নদীর টুসু মেলা হয়ে উঠেছে মিলন মেলা

January 16, 2023 | 2 min read

ছাইতনতলা টাঙন নদীর টুসু মেলা, ছবি সৌজন্যে- uttarbangasambad

এই বিপুলা বঙ্গদেশ বৈচিত্রের আধার, নানান উৎসব পালা-পার্বনে মুখরিত হয় বাংলা। তেমন বাংলার এক পরব হল টুসু, গতকাল অর্থাৎ রবিবার পৌষ মাসের সংক্রান্তির দিন বামনগোলার ছাইতনতলা টাঙন নদীর তীরে বসেছিল টুসু মেলা। এই মেলার বয়স একশোরও বেশি। এলাকার সমস্ত টুসু মূর্তি একত্রিত হয় এই মিলন মেলায়। এই মিলন মেলা টুসু মেলা (Tusu Mela) নামেই পরিচিত। মূলত কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষের টুসু পুজোকে কেন্দ্র করে এই মেলা বসে। যদিও ধর্ম, বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে অসংখ্য মানুষ প্রতিবছর এই মেলায় আসেন, মেলা হয়ে ওঠে সম্প্রীতির মিলন মেলা।

এই টুসু পুজো নিয়ে রয়েছে এক জনশ্রুতি ও লোককথা। আদপে টুসু কোনও আর্য দেবী নন। অগ্রহায়ণ মাসের সংক্রান্তি থেকে ছাইতনতলা ও পাশ্ববর্তী এলাকার কুড়মি সম্প্রদায়ের মহিলারা ছোট ছোট দল বেঁধে বিভিন্ন জায়গায় টুসু পুজো শুরু করেন। পৌষ মাসের সংক্রান্তি দিন ছাইতনতলা টাঙন নদীর ধারে সমস্ত টুসু মূর্তি একত্রিত করে শেষ বারের মতো পুজো করে বিসর্জন দিয়ে দেওয়া হয়। সেই উপলক্ষ্যেই টুসু মেলা। জনশ্রুতি অনুযায়ী, টুসু কুড়মি সম্প্রদায়ের কুমারী কন্যা। টুসুকে বিয়ে করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন ভিন সম্প্রদায়ের কোনও এক রাজা। টুসু বিয়েতে মত দেয়নি। টুসুর অভিভাবকরা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন রাজাকে। রাজা ক্রুদ্ধ হয়ে জোর করে বিয়ে করার কথা জানালে, টুসু বুঝেছিলেন রাজরোষে মর্যাদা ও সম্ভ্রম নষ্ট হবে। টুসু নিজের আত্মমর্যাদা ও সম্ভ্রম রক্ষায় নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। টুসুর এই আত্মত্যাগ, তাঁকে মানবী থেকে দেবীতে উন্নীত করে। টুসু মেলায় কুড়মি সম্প্রদায়েয় মহিলাদের টুসুকে নিয়ে গানের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়।

টুসুর পুজোর ক্ষেত্রে নানা রীতি রয়েছে। গ্রামের মহিলারা নিজেরাই টুসুর মূর্তি গড়েন। পাড়ায় পাড়ায় কয়েকটি বাড়ি মিলে আলাদা আলাদা দল ভাগ করে অগ্রহায়ণ সংক্রান্তি থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় চলে পুজো। টুসুর মূর্তির পাশে থাকে একটি মাটির নতুন হাঁড়ি। প্রতিদিন টুসুর নামে একটি করে ফুল ওই হাঁড়িতে রেখে মাটির সরা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। টুসুর ভোগ হিসেবে দেওয়া হয় চিড়ে, গুড়, মুড়ি, বাতাসা, ছোলা ইত্যাদি। টুসুকে নিয়ে বাঁধা গান হয়। গানের সুরে, কথায় ফুটে উঠে কল্পনা, দুঃখ, আনন্দ, ক্ষোভ, প্রতিবাদ সামাজিক নানা অভিজ্ঞতার কথা। পৌষ মাসের সংক্রান্তি অর্থাৎ শেষ দিন ফুলে ভরা মাটির হাঁড়ি ও গ্রামের সব টুসুর মূর্তি একত্রিত করা হয়। শেষ বারের মতো সমস্ত টুসু মূর্তির পুজো হয়, টুসুকে নিয়ে রচিত গানের আসর বসে। তারপর মাটির হাঁড়ি ও সব টুসুর মূর্তিগুলি মাথায় করে নিয়ে টাঙন নদীর জলে বিসর্জন দেওয়া হয়। টুসুর আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। সেই উপলক্ষ্যেই বসে মিলন মেলা। সারা বছর ধরে এই মেলার অপেক্ষা করে থাকেন অসংখ্য মানুষজন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#malda, #Tusu Mela, #Chaitantala

আরো দেখুন