চতুর্থস্তম্ভের উপর আঘাত আনার অভিযোগে আসরে দ্য এডিটরস গিল্ড অফ ইন্ডিয়া
সংবাদমাধ্যমের কাছে সূত্রই সম্পদ, কিন্তু তা নিয়েই বাধল বিপত্তি। গতকাল নয়াদিল্লির বিশেষ সিবিআই আদালত নির্দেশ দিয়েছে সাংবাদিকরা কোথা থেকে খবর পাচ্ছেন, তা আর তদন্তকারী সংস্থার কাছে গোপন রাখা যাবে না। চতুর্থস্তম্ভের উপর আঘাত আনার অভিযোগে আসরে নামলো দ্যি এডিটরস গিল্ড অফ ইন্ডিয়া।
বেশ কয়েক বছর আগে, একটি হাই প্রোফাইল মামলায় সূত্র নিয়ে তুলকালাম বেধেছিল। এক প্রভাবশালী জাতীয়স্তরের রাজনৈতিক নেতা, এবং তার পরিবারের সদস্যদের সম্পত্তি সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানির ঠিক আগের দিন এক সংবাদপত্রে ওই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়। পরে জানা যায় ভুয়ো নথিপত্রের ভিত্তিতে ওই খবর প্রকাশ হয়েছিল। তদন্ত শুরু হলে সাংবাদিক জানান, কোন সূত্রে তিনি খবরটি পেয়েছেন, তা প্রকাশ করতে পারবেন না। গতকাল রাউস অ্যাভিনিউ জেলা আদালতের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জলি মহাজন মামলার ক্লোজার রিপোর্টটি বাতিল করে দিয়ে জানান, তদন্ত চলাকালীন এক জন সাংবাদিক কোন সূত্রে খবর পেয়েছেন, তা তদন্তকারী সংস্থার কাছে গোপন রাখতে পারবেন না। তদন্তের জন্যে সাংবাদিককে সব কিছু প্রকাশ্যে আনতে হবে। কোনও খবর প্রকাশিত হলে, তার মূল সূত্র কী? কোন তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তা প্রকাশ করা হয়েছে, তার বিবরণ তদন্তকারী সংস্থার হাতে দিতে হবে বলেই জানিয়েছেন বিচারক। এদিনই ওই মামলা সংক্রান্ত তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত। এতেই মাঠে নেমেছে সম্পাদকদের সংগঠন।
এডিটর’স গিল্ড অফ ইন্ডিয়ার বক্তব্য, সরকার কখনওই একা হাতে ঠিক করতে পারে না কোন খবরটা ভুয়ো, কোনটা সত্যি! খসড়ায় সংশোধন আনার জন্যে সরকারের কাছে আবেদন করেছেন সম্পাদকদের গিল্ড। বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে, তবে নয়া নিয়ম চালু করা উচিত, এমনটাই মত গিল্ডের। তথ্য প্রযুক্তি আইনের খসড়া সংশোধনের বিষয়ে গিল্ডের সাফ কথা ভুয়ো খবর নির্ণয় করা সরকারের একার হাতে থাকতে পারে না এবং এমন হলে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বিঘ্নিত হবে।
মঙ্গলবার ইলেকট্রনিক্স ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রক একটি খসড়া তথ্য প্রযুক্তি আইন প্রকাশ্যে এনেছে। উল্লেখ্য, ২০২১ সালের মার্চে প্রথম আইনটি আসে। তারপর নানান আপত্তি ওঠে, ফলে ২০২১ সালের আইনে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। কার্যত এই আইনে সমাজমাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণ আনা হচ্ছ। নয়া নিয়মে প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর মতো কেন্দ্রের অধীনস্থ সংস্থাকে অসীম ক্ষমতা দেওয়া হবে। তারা ইচ্ছে করলেই সমাজমাধ্যম থেকে যেকোন ধরণের খবর সরিয়ে করে দিতে পারবে। এতে স্বাধীনতাকে ক্ষমতাকে খর্ব করা হবে। গিল্ডের মত, সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা চলছে। গিল্ডের মত, এমনটা হলে কোনও সংবাদমাধ্যম আর সরকারের সমালোচনা করতে পারবে না, ডিজিটাল মাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হবে। সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণে আনতেই কি এমনটা করছে মোদী সরকার? উঠছে প্রশ্ন।