এলিফ্যান্ট করিডর থেকে গজমিত্র, হাতি হানা রুখতে একাধিক উদ্যোগ রাজ্যের
খাদ্যের খোঁজে নিত্যদিন হাতি ঢুকে পড়ে লোকালয়ে। খাদ্য শস্য বাঁচাতে মানুষের সঙ্গে শুরু হয় হিউম্যান-এলিফ্যান্ট কনফ্লিট, মানুষ ও হাতির সংঘাত। হাতির হানায় প্রতি বছর দেশজুড়ে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনায়, ট্রেনের ধাক্কায় অসংখ্য হাতিরও মৃত্যু হয়। পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, ওড়িশা, বিহার ও মধ্যপ্রদেশে এই মেটাতে প্রায় নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়ে। সেই কারণে কলকাতায় অনুষ্ঠিত পূর্বাঞ্চলের বৈঠকে ছয় রাজ্যে হাতি করিডরের উন্নয়ন ও সুরক্ষার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গত চার বছরে বাংলায় হাতির হানায় মৃত্যুর ঘটনা কমেছে। উত্তরবঙ্গে সাতটি নতুন করিডর তৈরিরও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
গতকাল নিউটাউনের এক হোটেলে হিউম্যান-এলিফ্যান্ট কনফ্লিট নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হয়। ছয় রাজ্যের প্রতিনিধিরাসহ প্রজেক্ট এলিফ্যান্ট ডিরেক্টর বৈঠকে বসেন। রাজ্যের বনমন্ত্রী, প্রধান মুখ্য বনপাল সৌমিত্র দাশগুপ্ত, প্রধান মুখ্য বনপাল, বন্যপ্রাণ দেবল রায়রা হাজির ছিলেন। খবর মিলেছে, জঙ্গলে হাতির খাবার ও জলের সমস্যা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সরকারি তথ্য বলে দেশে ৩০ হাজার হাতি রয়েছে। প্রতি বছর হাতির হানায় গড়ে ৫০০ মানুষের মৃত্যু হয়। একশোর কাছাকাছি হাতিও মারা যায় ফি বছর। ২০১০ সালে হাতির জন্যে ৮৮টি করিডর চিহ্নিত করা হয়। আরও করিডরেরও (Elephant Corridor) সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। কীভাবে, এগুলির উন্নয়ন ও সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যাতায়াতের সময় রেললাইনে হাতি কাটা পড়ে, তারা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। এগুলো রুখতে আঞ্চলিক স্তরে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
উত্তরবঙ্গে হাতির জন্য নতুন সাতটি করিডর তৈরি করেছে রাজ্য। গত চার বছরে এরাজ্যে হাতির আক্রমণের প্রাণহানির সংখ্যা কমেছে। ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পেয়েছে, তথ্য বলছে হাতির হানা ২০১৯-২০২০ সালে ১৩৪ জন, ২০২০-২০২১ সালে ১১৭ জন, ২০২১-২০২২ সালে ৭৭ জন এবং ২০২২-২০২৩ সালে ৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। হাতির হানা মৃতদের ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়িয়ে জনপ্রতি পাঁচ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। একদিনেই তা দেওয়া হয়। হাতির হানা নিয়ে বাঁকুড়ায় নয়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বনকর্মীদের চলাফেরার জন্যে ৩৯৩টি বাইক দেওয়া হচ্ছে। আগে ১২-১৪ বছর অন্তর দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের জঙ্গলে গাছ কাটা হত। এখন হাতি বাঁচার পরিবেশ আরও সুন্দর করতে জঙ্গলে গাছ ২০ বছর করে ধরে রাখা হচ্ছে। গ্রামে গ্রামে ফেন্সিং করা হয়েছে। হাতির হানা রুখতে আলোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হাতির খবর পেতে এখন গজমিত্রদের কাজে লাগানো হচ্ছে।