পয়লা ফেব্রুয়ারি মোদী সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেটের দিকে তাকিয়ে দেশবাসী
পয়লা ফেব্রুয়ারি সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। দ্বিতীয় মোদী সরকারের এটিই শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট।
এই বাজেটের দিকে তাকিয়ে থাকেন সকলে। আমজনতা থেকে ব্যবসায়ী, সকলের মনেই হাজারও প্রত্যাশা থাকে। প্রত্যেকেই তাকিয়ে থাকেন কোন জিনিসের দাম বাড়ল, কোনটার দাম কমল সে’দিকে। আবার কর বিন্যাস কেমন হল, আয়করে হিসেব কী দাঁড়াল আর সেই সঙ্গে থাকে কিছু চাহিদা। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের বাজেটের আগে কী চাইছে আমজনতা? মোদী সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা কী?
আমজনতা থেকে মধ্যবিত্ত সকলের একটাই প্রার্থনা, বাজেটে সরকার দেশের সাধারণ মানুষের জন্যেও কিছু ভাবুক। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ফের নাগালের মধ্যে আসুক, জ্বালানির দাম কমুক। কয়েক বছর ধরে খুচরো ও পাইকারী বাজরের মুদ্রাস্ফীতির পরিসংখ্যান মোটেই ভাল নয়। সাধারণ মানুষের বক্তব্য, যে হারে দৈনন্দিনকার খরচ বাড়ছে তাতে সংসার চালানো দায়। করোনার ধাক্কায় এমনিতেই টালমাটাল অবস্থা অর্থীতির, তারউপর টাকার পতন রুখতে রেপো রেট বাড়িয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। যার বোঝা আদপে সেই দেশবাসীর ঘাড়েই চেপেছে।
এই বাজেটে মোদী সরকারের কাছে দেশবাসীর অন্যতম প্রার্থনা, পেট্র পণ্যের দাম কমানো। বিগত অর্থ বছরে পেট্রল-ডিজেলের দাম আকাশ ছুঁয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও, দেশবাসী সে সুবিধা পায়নি। জ্বালানি দ্রব্যের মধ্যে রান্নার গ্যাসের দামও গগনচুম্বী। আমজনতার দাবি, গ্যাসের দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসুক সরকার, যাতে সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তি পায়।
খাদ্য পণ্যের উপর মুদ্রাস্ফীতির সরাসরি প্রভাব পড়েছে, হিসেব করলে দাঁড়ায় গড়ে প্রায় ৬.৮ শতাংশ, ২০২১ সালে যার পরিমাণ ছিল ৩.১ অর্থাৎ বৃদ্ধির হার দ্বিগুণেরও বেশি। লক্ষ্য করলেই দেখা যায়, বেশ কিছু বছরের মধ্যে গত অর্থ বছরেই বেকারিজাত পণ্য- পাউরুটি, বিস্কুটের দাম বেড়েছে। দুগ্ধজাত পণ্যের ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতি গড়ে ৮ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দুগ্ধজাত পণ্যের দাম বেড়েছে, দুধ থেকে মাখন-সবকিছুর দামই উর্ধ্বমুখী। মধ্যবিত্তদের দাবি, এই বাজেটের পর যেন খাদ্য পণ্যের দাম কমে।, এছাড়াও ট্রেন থেকে পানীয় জল, নিকাশী থেকে নগরায়ণ; নানা দাবি দাওয়া তো রয়েছেই।
কর ব্যবস্থা, আয়কর বিন্যাস নিয়েও আমজনতার প্রত্যাশা রয়েছে। কিন্তু তা কতটা কী বাস্তবায়িত হবে, বলা মুশকিল। অন্তত নির্মলা সীতারামনের শেষ কয়েকটি সাক্ষাৎকার বলে দিচ্ছে, আয়কর নিয়ে তেমন প্রত্যাশা না রাখাই ভাল। বাড়তি কোনও ছাড় হয়ত মিলবে না, তবে দেখার বাড়তি বা নতুন কোনও করের বোঝা চাপে কিনা। যদিও সে সম্ভাবনা ক্ষীণ। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য বলছে, গত দুই অর্থ বছরে ব্যাঙ্কগুলির মেয়াদী আমানতের উপর গড় সুদের হার প্রায় পাঁচ শতাংশের নীচে নামিয়ে এনেছে। ২০১৮ সালে পাঁচ বছরের একটি ট্যাক্স-সেভিং ফিক্সড ডিপোজিট থেকে ৮.২৫ শতাংশ হার সুদ পাওয়া গেলেও এখন ওই একই টাকার অঙ্কের বিনিময়ে একই ব্যাঙ্ক ৭ শতাংশ হারে সুদ দিচ্ছে। একই ছবি অন্যান্ন স্কিমের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে। আমানতের উপর সুদের হার লাগাতার কমছে। প্রবীণ নাগরিকদের অনেকের আয়ের উৎসই হল এই সুদ বাবদ পাওয়া অর্থ। তাই তারাও মুখিয়ে আছেন, বাজেটে তাদের কথা ভাবা হল কিনা তার দিকে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যেহেতু ২৪-এর লোকসভার নির্বাচনের আগে এটিই সর্বশেষ বাজেট, তাই জনতার মন পেতে বাজেটে কিছুটা জনমুখী দৃষ্টিভঙ্গির দেখা মিলতে পারে। তবে সবটার উত্তর মিলবে ফেব্রুয়ারির মাস পয়লায়।