তড়িঘড়ি কেন ২০০টিরও বেশি চীনা অ্যাপ বন্ধ করছে মোদী সরকার?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: হঠাৎ করেই ২০০টিরও বেশি চীনা অ্যাপ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার। ইতিমধ্যেই মোদী সরকারের তরফে অ্যাপগুলি নিষিদ্ধ এবং ব্লক করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মোদী সরকারের ইলেক্ট্রনিক্স ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রক যত দ্রুত সম্ভব ১৩৮ বেটিং অ্যাপ ও ৯৪টি ঋণপ্রদানকারী অ্যাপ নিষিদ্ধ এবং ব্লক করার জন্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে সুপারিশ করেছে। অ্যাপগুলির সঙ্গে যে চীনের যোগ রয়েছে, তা নিশ্চিত হয়েই এহেন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই অ্যাপগুলি দেশের তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৬৯ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করেছে। অ্যাপগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ, অ্যাপগুলির কন্টেন্ট দেশের সার্বোভৌমত্ব ও অখণ্ডতার পক্ষে এই অ্যাপগুলো ক্ষতিকারক। সে কারণেই জরুরি ভিত্তিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানা গিয়েছে, ১৩৮টি বেটিং অ্যাপ এবং ৯৪টি লোন লেন্ডিং অ্যাপের বিরুদ্ধে প্রচুর অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগ উঠছে, বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি পরিচালিত এই অ্যাপগুলি প্রথমে স্বল্প পরিমাণ অর্থ ঋণ দেয়, তারপর জোর করে তা আদায় করে। ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে নানান রকম সমস্যার মুখে পড়ছেন ঋণগ্রহণকারীরা। সরকারি তদন্তে নাকি জানা গিয়েছে, এই অ্যাপগুলি চীনাদের মস্তিকপ্রসূত। এও জানা গিয়েছে, অ্যাপগুলি নাকি তাদের কাজ চালানোর জন্য ভারতীয় নাগরিকদেরই নিয়োগ করে। সংশ্লিষ্ট সংস্থার ডিরেক্টর পদে বসিয়ে কাজ হাসিল করা হয়। নানা রকম প্রলোভন দেখিয়ে ঋণ দেওয়া হয়, তারপর কৌশলে সুদসহ ঋণ আদায় করা হয়। তদন্তে উঠে এসেছে, এই চীনা অ্যাপগুলি ঋণগ্রহণকারীর থেকে বছরে সম্মিলিতভাবে ৩০০০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ আদায় করে। সময় মতো ঋণ শোধ করতে না পারলে অশ্লীল মেসেজ পাঠানো, হুমকি দেওয়া, বিকৃত করা ছবি সমাজ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি ইত্যাদি দেওয়া হয়।
ঋণগ্রহণকারীদের হেনস্তা করার জন্য নানা অনৈতিক উপায় অবলম্বন করে অ্যাপগুলো। হয়রানির শিকার হয়ে অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। ঋণ শোধ করতে না পেরে বা বেটিং অ্যাপে টাকা খুইয়ে অনেকেই আত্মহত্যার পথও বেছে নিচ্ছেন। এমন ঘটনা বারবার হচ্ছে। অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গনা, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলি এবং কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলে। তদন্তের পর উঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ইলেক্ট্রনিক্স ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রককে ২৩২টি অ্যাপকে ব্যান ও ব্লক করার জন্য সুপারিশ করেছে।
এমন ধরণের অ্যাপের অধিকাংশ ই-স্টোরে রয়েছে। আবার কিছু কিছু অ্যাপ থার্ডপার্টি লিঙ্কের মাধ্যমে কাজ করে। এমন অনেক অ্যাপ রয়েছে, যেগুলি লিঙ্ক বা ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা যায়। তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রক তরফে অ্যাডভাইজরি জারি করে বলা হয়েছে, দেশের অধিকাংশ অংশে বেটিং ও জুয়া বেআইনি, তাই উপভোক্তা সুরক্ষা আইন ২০১৯, কেবল টিভি নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯৫ ও তথ্য-প্রযুক্তি আইন ২০২১ অনুসারে এমন অ্যাপগুলির বিজ্ঞাপনও বেআইনি। ফলত এসব অ্যাপের বিজ্ঞাপনের উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে।