বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

‘গুপ্তচর বেলুন’ কি এবং কেন এটি ব্যবহার করা হয়?

February 7, 2023 | 3 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: আমেরিকার আকাশসীমায় ঢুকে পড়া চীনা বেলুন নিয়ে শোরগোল পড়ে গেছে গোটা বিশ্বে। যদিও রহস্যময় ওই চীনা বেলুনকে শনিবারই গুলি করে নামিয়েছে আমেরিকা। পেন্টাগন দাবি করেছিল, আমেরিকার ‘স্পর্শকাতর’ সামরিক কেন্দ্রগুলির উপর নজরদারি চালাচ্ছে চিনের ওই বেলুনটি। আবার গুলি করে বেলুনটি নামোনার সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে আমেরিকার উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে চিন জানিয়েছে, ‘প্রয়োজনীয় প্রতিক্রিয়া’ জানানোর রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। অর্থাৎ, আমেরিকার আগ্রাসী পদক্ষেপের পাল্টা তাঁরাও যে আক্রমণাত্মক রণকৌশল নিতে পারেন, তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বেজিং প্রশাসনের তরফে প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে।

চীনা বেলুন আমেরিকার আকাশে এল কিভাবে?

মন্টানার বিলিংস শহরের আকাশে দেখা যাওয়ার আগে বেলুনটি আলাস্কার অ্যালেউটিয়ান দ্বীপপুঞ্জ এবং কানাডার মধ্য দিয়ে উড়ে এসেছে। এ ধরনের বেলুনে সাধারণ হিলিয়াম গ্যাসে ভরা থাকে। এটি আকাশের অনেক উঁচুতে উড়তে সক্ষম হয়। বেলুনের নীচের অংশে একটি সৌরশক্তির প্যানেল থাকে, যা বেলুনটি পরিচালনার শক্তি যোগায়। এর নীচেই ক্যামেরা, রাডার, সেন্সর এবং যোগাযোগের সরঞ্জামগুলো থাকে। নজরদারি বেলুনটিকে ছোটখাটো বিমান বললেও ভুল হবে না। বিমানের থেকেও বেশি উচু দিয়ে উড়তে পারে এই নজরদারি বেলুন। এমনিতে ৮০ হাজার ফুট উঁচু দিয়ে উড়ে যায় এই বেলুন। সর্বোচ্চ ১ লক্ষ ২০ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়তে পারে।

চীন দাবি করেছে যে, ওয়েস্টারলিস বাতাসে বেলুনটিকে তার নির্দিষ্ট পথ থেকে সরিয়ে নিয়ে গেছে। চীন এবং উত্তর আমেরিকার মাঝে নর্থ প্যাসিফিকে যে বাতাস বয়ে থাকে, তাকে বলা হয় ওয়েস্টারলিস।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘’বেশিরভাগ ওয়েদার বেলুন এক লাখ ফিট উচ্চতায় ওড়ে। কয়েক ঘণ্টা পরে সেটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে যন্ত্রপাতিগুলো প্যারাসুটের মাধ্যমে নীচে নেমে আসে। কিন্তু এটার মতো এতদিন ধরে এরকম একটি বেলুনের আকাশে ওড়া বেশ অস্বাভাবিক’’

কিংস কলেজ লন্ডনের প্রতিরক্ষা বিষয়ক গবেষক ড. মারিনা মিরন বলছেন, চীন যতটা দাবি করছে, বেলুনটি হয়তো তার চেয়েও বেশি অত্যাধুনিক। হয়তো বেলুনটি ভূমি থেকে রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকতে পারে। ফলে তারা সেটিকে উঁচুতে তুলে বা নীচে নামিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, যাতে সেটি বিভিন্ন বাতাসের গতি ব্যবহার করে নানা দিকে যেতে পারে। আপনি হয়তো একটি জায়গায় স্থির থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে চান। তখন এমন কিছু এই বেলুন দিয়ে করতে পারবেন, যা স্যাটেলাইট দিয়ে পারবেন না।

বেলুন কেন?

সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শত্রু দেশের উপর বেলুনের মাধ্যমে নজর রাখার ব্যবস্থা আজকের নয়। একশো বছরেরও বেশি সময় ধরে এ ভাবেই বেলুনকে গুপ্তচর করে পাঠায় বিভিন্ন দেশ। শুধু প্রযুক্তিটা বদলে গিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রে অগ্নিসংযোগকারী বোমা হামলা করতে জাপানিরা বেলুন ব্যবহার করেছিল। স্নায়ুযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নও ব্যাপকভাবে নজরদারী করতে বেলুন ব্যবহার করেছিল।

আমেরিকার গৃহযুদ্ধে প্রথম বার এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল। ১৮৬২ সালের এপ্রিলে ইউনিয়ন পক্ষের জেনারেল ফিৎজ জন পোর্টার বেলুনে চড়ে শত্রুপক্ষের উপর নজরদারি চালাতে বার হন। শত্রুরা বেলুন লক্ষ্য করে গুলি চালায়। বেলুন নিয়ে কোনও মতে ইউনিয়নের দিকে চলে আসেন জেনারেল।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে হাইড্রোজেন ভরা বেলুন বড় ভূমিকা নিয়েছিল। সব থেকে বেশি ব্যবহার করেছিল সম্ভবত আমেরিকা। তাদের বেলুন দেখলেই গুলি করত শত্রুপক্ষ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকায় প্রায় ন’হাজার বোমা ভরা বেলুন পাঠিয়েছিল জাপান।

আধুনিক যে বেলুনগুলো রয়েছে, সেগুলো ভূপৃষ্ঠ থেকে ২৪ থেকে ৩৭ কিলোমিটার অর্থাৎ ৮০ হাজার ফুট থেকে এক লাখ ২০ হাজার ফুট উঁচুতে উড়তে পারে। এয়ার-পাওয়ার বিশেষজ্ঞ হে ইয়ুন মিং বিবিসিকে বলেছন, ‘’বেইজিং হয়তো ওয়াশিংটনকে এই বার্তা দিতে চাইছে যে, আমরা যেমন সম্পর্ক ভালো করতে চাই, তেমনি যেকোনো রকমেই হোক, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্যও প্রস্তুত আছি।‘’

তিনি মনে করছেন, যেভাবে বেলুনটি নির্দিষ্ট একটি ক্ষেপণাস্ত্র ঘাটির কাছাকাছি উড়ে গেছে, তাতে সেটি পথভ্রষ্ট হয়ে সেখানে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্যাটেলাইট বা ড্রোনের তুলনায় বেলুনের বাড়তি কিছু সুবিধা আছে। একটি কম ব্যয়বহুল এবং খুব সহজেই মোতায়েন করা যায়। স্যাটেলাইট তার নিজের কক্ষপথেই ঘুরতে থাকে। কিন্তু বেলুন যেকোনো জায়গায় পাঠানো যায়। ড্রোনের তুলনায় এটি অনেক ধীরগতিতে ওড়ে বলে অনেক সময় নিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে নজরদারী করা সম্ভব।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Chinese Spy Balloon, #Spy Balloon

আরো দেখুন