আজ ‘বইমেলার দশমী’, অন্তিম লগ্নে বাঙালির চোদ্দতম পার্বণ
সৌভিক রাজ
আজও দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী বললেই উঠে আসে কলকাতার কথা। কলকাতাকে অনন্য করে তুলেছে বাংলা ও বাঙালির হাজারও উৎসব; দুর্গা পুজো, পালা-পার্বণ তো আছেই। সঙ্গে আছে চলচ্চিত্র উৎসব, বইমেলা। কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা, গোটা বছর বাঙালি অপেক্ষা করে থাকে এই দিনটার জন্যে। লেখক, প্রকাশক থেকে পাঠক-বইপ্রেমী সকলেই মেতে ওঠে এই উৎসব ঘিরে। আজ সেই উৎসবের শেষ দিন, আবারও একটা বছরের অপেক্ষা।
এ বছর মেলা শুরু হয়েছিল ৩০ জানুয়ারি। করোনার কারণে ২০২১ সালে বইমেলা আয়োজন করা যায়নি। ২০২২-এর বইমেলাও হয়েছে হাজারও নিয়ম মেনে। সেই অর্থেই এবারই করোনা মুক্ত বইমেলা হল। মানুষও ভিড় জমালেন। কাতারে কাতারে মানুষ এসেছে, নবীন-প্রবীণদের বই কিনেছেন। সই থেকে সেলফি, ধুম পড়েছে প্রিয় লেখক-লেখিকার সঙ্গে মুহূর্ত বন্দি করে রাখার। প্রকাশকরা বলছেন রেকর্ড বিক্রি হয়েছে। আনন্দ আবারও অষ্টমীর লাইনকে হার মানিয়েছে। নতুন নতুন প্রকাশনী নতুন লেখকদের নিয়ে হাজির হয়েছেন। লিটিল ম্যাগাজিন প্যাভেলিয়ন নিজের মতো করেই উজ্জ্বল এবারেও। মৃণাল সেন মঞ্চ প্রতিদিনই মুখরিত হয়েছে নবীন কবিদের কবিতায়। পট থেকে হ্যান্ডমেড জুয়েলারি, সবরকম পসরা সাজিয়ে বসেছেন মানুষজন। চলছে ছবি আঁকা। বিকোচ্ছে নানা ছবি। তালপাতার সিপাই থেকে পরিবেশবান্ধব পেন, অমল দত্ত অর্থাৎ একালের দাদাঠাকুর থেকে পশ্চিমবঙ্গ মণ্ডপ, এশিয়াটিক সোসাইটির প্রদর্শনী থেকে রাজ্য পুলিশের প্রদর্শনী; সব মিলিয়ে বইমেলা রয়েছে বইমেলাতেই। স্টলে স্টলে ক্যুইজের আসর, বাবা-মায়ের হাতে ধরে মেলায় আসা কচিকাঁচার তুলে নিচ্ছেন হাঁদা-ভোঁদা, নন্টে-ফন্টে আবহমানকাল ধরে, এভাবেই পাঠকের জন্ম দিয়ে এসেছে বাংলা।
তবে বই ক্রেতা-বিক্রেতাদের, বইমেলার ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হল পুলিশ ও ট্রাফিক; অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তারা গোটা মেলা সামলে ফেললেন। রাজ্যের পরিবহণ দপ্তরের বাস পরিষেবায় খুশি বইমেলায় আসা আমজনতা। আজ শেষ লগ্নে বইমেলা। শেষ মুহূর্তের আনন্দটুকুও চেটেপুটে নিতে চাইছে বাঙালি। আজও ভিড়ের আশঙ্কায় প্রকাশকরা। নিঃশেষিত বই নতুন করে ছাপা হয়ে আসছে একদিনের জন্যে, বাঁধাইঘরে লড়ে যাচ্ছেন বাঁধাইকর্মীরা। ছাপাখানা, বাঁধাইকর্মী, লেখক, প্রকাশক, বইপ্রেমী, পাঠক সব্বাই মিলে ফের জিতিয়ে দিল বইমেলাকে। আজও বাঙালির প্রিয় গন্ধ যে নতুন বইয়ের গন্ধ, তা ফের প্রমাণিত হল। এবার এক বছরের অপেক্ষা, আসছে বছর আবার হবে!