বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

সবটা ‘Bong’ হয়ে যাবে না তো?

February 20, 2023 | 3 min read

সৌভিক রাজ

জাতি থাকলেই জাতীয়তাবাদ, বা উল্টোটা! আস্তে আস্তে ফেরা শুরু হচ্ছে। ফেরা? তার মানে সত্যিই চলে গিয়েছিল?

আদ্যন্ত বাঙালি, ক্যাব চালক ফোন করতেই উত্তর দিচ্ছেন, ‘হা ভাইয়া আপ কাহা পড় হো?’, সুইগির ছেলেটিকে বলছেন, ‘মন্দির কি পিছেওয়ালে গলি সে আ জাও’, বাসে উঠেই বলছেন ‘দো বিশ দো’; এই করে করেই তো বাঙালি জেনে শুনে বিষ পান করে ফেলল। ভেবে দেখেছেন, ক্যাব চালকের নাম হয়ত রাজীব মুখার্জী, সুইগির হয়ে খাবার দিতে আসা ছেলেটা হয়ত আপনার চেয়েও স্পষ্ট বাংলা বলে, কন্ডাক্টর হয়ত টিকিট দিতে দিতে বলবেন ‘এ নিন দাদা।’ এভাবেই তো হারিয়ে যাচ্ছিল আস্ত একখানা বাংলা। বঙ্গ সন্তান বাংলায় কথা বললে জরিমানাও দিতে হয়। বাংলায় বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে না। হিন্দি ছবি প্রেক্ষাগৃহে অগ্রাধিকার পায়। আমরা ফেসবুক পোস্ট করি, বাঙালি বঞ্চিত বলে কাঁদুনি গাই। সত্যজিতের অস্কার, রবি ঠাকুরের নোবেল আর সৌরভের জামা ওড়ানোর গল্প বলে ঘুমিয়ে পড়ি।

বঙ্গ জীবনের অঙ্গ ইলিশ

বাঙালি না হলে, বুঝতে পারতেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের জন্যে আজও রাত জাগে কয়েক কোটি লোক, ইলিশ হলে যে চাল একটু বেশি নিতে হয়। ছাতিমের গন্ধ, বোরোলিন, জয়নগরের মোয়া, নলেন গুড় মেশা বাংলাটাকে বেহাত করে দিচ্ছিলেন?

এ জিনিসটা কি এক দিনে হল? কবে হল?

কোন জিনিস কখনো একবারে বা একদিনে হয়? রাজনীতিতে বিরোধী শূন্য হলেই নতুন শক্তির উত্থান হয়। বাংলাও ঠিক সেভাবেই বাঙালির বেহাত হতে বসেছিল। সেই স্মরণাতীত কাল থেকেই নানান জাতি, নানা ভাষার মানুষ বাংলায় ঘাঁটি গেড়েছিল। সব্বাই তো খারাপও হয় না, লঙ সাহেবের কথাই দেখুন না। সে তো বাংলা ভাষার জন্যে প্রানপাত করেছেন। আমহার্স্ট স্ট্রিটের সিএমএস চ্যাপেল অর্থাৎ কোরি চার্চে আজও বাংলায় প্রার্থনা হয়। বলা বাহুল্য, ভিন্ন ভাষার মানুষ বাংলার জাতিসত্ত্বা কেড়ে নিতে আসেনি। বরং বাঙালিই যেচে নিজ জাতিসত্ত্বা লুপ্ত করতে উঠে পড়ে লেগেছে। বিয়ে ‘সঙ্গীত’ আয়োজন করতেই হবে, অথচ একদা বাঙালি বিয়েতে গানের রেওয়াজ ছিল। ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে করতে যাওয়ার রীতিও বাঙালি কারো থেকে নকল করছে না, একদা বঙ্গে এমনটাই হত।

ছবি সৌজন্যে: beforeimarry


আগডোম বাগডোম ঘোড়াডোম সাজে।
ঢাক মৃদং ঝাঁঝর বাজে।।
বাজতে বাজতে চলল ঢুলি।
ঢুলি গেল সেই কমলাফুলি।।
কমলাফুলির টিয়েটা।
সুয্যিমামার বিয়েটা।।

শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে নেতাজীর মূর্তি। ছবি সৌজন্যে: wikiwand

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘ছেলেভুলোনোর ছড়া’ গ্রন্থে বলেছেন যে, এই ছড়াটির প্রথম কয়টি ছত্রে বিবাহ যাত্রার বর্ণনা রয়েছে। পূর্বে অভিজাত পরিবারের বিবাহের শোভাযাত্রা ছিল যুদ্ধযাত্রার পরিবর্তিত রূপ। কারণ তদানীন্তন সময়ে জোর করে মেয়েদের তুলে আনা হত। বিজয়ী গোষ্ঠীর পুরুষেরা বিজিত গোষ্ঠীর মেয়েদের বিয়ে করবে, এমন প্রথাই সামাজে প্রচলিত ছিল। ঘোড়ার কথা এসে পড়তেই মনে পড়ল, বাঙালির জাত্যাভিমান দখল কেমন করে হচ্ছে দেখুন। সুভাষ বোসের মূর্তিটিও আমাদের আউটরামের অনুকরণে বানাতে হল! আসলে আমরাই থালা সাজিয়ে অন্য হাতে তুলে দিয়েছি, নিজেদের জাতিসত্ত্বা। মানিকবাবুর আগন্তুক বা সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় পুরুষের সংলাপ আওড়ে বাংলা, বাঙালির হয়ে উঠবে না। বিপন্ন ট্যাগ আটকে নয়, বাঙালি যেদিন বুঝবে না এবার উঠতে হবে। সেদিনই হবে ফেরার শুরু। আমার বিশ্বাস তা শুরু হয়েছে, খুব অল্প মাত্রায় কিন্তু তা শুরু হয়েছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #Bengali, #Bong

আরো দেখুন