বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

পাঁচশো বছর ধরে আসানসোলে পূজিত হচ্ছেন চণ্ডীদেবী মা ঘাঁঘর বুড়ি

February 23, 2023 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বাংলার লৌকিক দর্শনে মিশেছেন দেবী চণ্ডী। থান থেকে মন্দির, নানা জায়গায় তিনি নানা নামে পূজিতা। রাঢ় বঙ্গের খনি সমৃদ্ধ অঞ্চল হল আসানসোলের অন্যতম চণ্ডীদেবী হলেন ঘাঁঘর বুড়ি। উত্তরে শীর্ণকায় নুনিয়া নদীর তীরে জাগ্রত দেবী ঘাঁঘর বুড়ির মন্দির। এই মন্দিরের বয়স পাঁচশো বছরেরও বেশি, তেমনটাই বলে জনশ্রুতি। যখন মন্দির প্রতিষ্ঠিতি হয়েছিল, সেই সময় আসানসোল ছিল আসান গাছের জঙ্গলে ঘেরা জনমানবহীন প্রান্তর। আসান গাছের কান্ড ফুটো করলে সুমিষ্ট জল পাওয়া যায়। সল হল রাঢ় বাংলার ডাঙ্গাল জমি। দুইয়ে মিলে আসানসোল। তবে এখন আর আসানসোলে আসান গাছ দেখা যায় না, যদিও তামিলনাড়ু তথা দক্ষিণ ভারতে আসান গাছ পাওয়া যায়।

সেখানেই দু-তিনটি বাড়ি নিয়ে গড়ে উঠেছিল এক গ্রাম। গ্রামে যজমানি করতেন কাঙালিচরণ চক্রবর্তী। নুনিয়া নদী পেরিয়ে আশেপাশের বিভিন্ন গ্রামে তিনি পুজোর্চ্চনা করতেন। কোনও এক বছর এক পয়লা মাঘে পুজো করে কিছুই পাননি কাঙালি চরণ। নুনিয়া নদী পেরিয়ে ক্ষুধার্ত-তৃষ্ণার্ত কাঙালিচরণ গাছতলার নীচে শুয়ে কাতরভাবে দেবী চণ্ডীকে ডাকছিলেন। হঠাৎ করেই লাঠির শব্দে কাঙালিচরণের ঘুম ভাঙে। কাঙালিচরণ এক ঘাগড়া পরিহিত বুড়িকে দেখতে পান। তাঁকে দেখেই কাঙালিচরণের চোখ ঝলসে গিয়েছিল। ঘুমন্ত অবস্থায় কাঙালিচরণ শুনতে পান, তাঁকে যেন কেউ বলছেন- কাঙালিচরণের আর ভিক্ষাবৃত্তির দরকার নেই। ঘুম ভাঙলেই তিনি দেখবেন, কোলে তিনখানা পাথর। মধ্যের পাথরটা মা ঘাঁঘর বুড়ি। বাঁম দিকে মা অন্নপূর্ণা। ডানে পঞ্চানন মহাদেব। এইখানেই মন্দির প্রতিষ্ঠা করার আদেশন পান তিনি। আর কোথাও যেতে হবে না। মা ঘাঁঘর বুড়ির আদেশে ১৬২০ সালে মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়। এই পাথরের ঢিবিগুলিকেই ফুল এবং রুপোর গয়নায় সাজানো হয়। ১৬২০ সালের ১লা মাঘকে স্মরণ করে প্রতি বছর মন্দিরের সামনের মাঠে ঘাঁঘর বুড়ি চণ্ডীমাতার মেলা বসে।

তারপর থেকেই ওই অঞ্চলে তিনটি পাথরকে পুজো করা হয়। ঘাঁঘর শব্দের অন্যতম অর্থ হল নদী। নুনিয়া নদীর দক্ষিণ তীরে এই মন্দির অবস্থিত। ইতিহাসবিদদের মত, সেকারণেও দেবীর নাম ঘাঁঘরবুড়ি হতে পারে। অন্য মতে, ঘাঁঘর শব্দের অর্থ হল, ঝাঁজ, বাদ্য ও ঘুঙুর। নৃত্য, গীত, বাদ্য সহকারে বহু দেবীর পুজোর প্রচলন ছিল। মন্দির সংলগ্ন এলাকাটি আদিবাসী অধ্যুষিত। অতীতে এখানে নৃত্য-গীত-বাদ্য সহকারে যে মায়ের পুজো হত, সেবিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। ভক্তদের বিশ্বাস, দেবী অত্যন্ত জাগ্রত। মনস্কামনা পূরণ আবার, ভক্তরা গাছের সঙ্গে কাপড় বেঁধে দিয়ে যান। দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা পুজো দিতে আসেন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #asansol, #temples, #Mandir, #Worship, #chandi debi, #ma ghaghor buri

আরো দেখুন