এবার অ্যাডিনো নিয়ে উদ্বেগ বড়দেরও, কাশি দীর্ঘস্থায়ী হলেই ব্যবস্থা নিন
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ইতিমধ্যেই অ্যাডিনো ভাইরাসকে ঘিরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, অ্যাডিনো ভাইরাসও রূপ বদলে ভয়ঙ্কর হচ্ছে। এই রূপ বদলের কারণেই শিশুরা পুরোপুরি সুস্থ হচ্ছে না। চিকিৎসকদের দাবি, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরে, অ্যাডিনো ভাইরাস আক্রান্ত শিশুদের ফুসফুসের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ভেন্টিলেশন থেকে জেনারেল বেডের দেওয়ার পর, কোনও কোনও বাচ্চার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। অনেককেই নতুন করে ফের ভেন্টিলেশনেও রাখতে হচ্ছে। আবারও শ্বাসকষ্টর সমস্যা হচ্ছে। শিশুদের সঙ্গে সঙ্গে বড়দের নিয়েও বড়দেরও থাকছে। চিকিৎসকরা বলছেন, অনেকেই প্রায় এক মাসের বেশি সময় যাবৎ কাশির সমস্যায় ভুগছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, বড়দের শরীরেও হয়ত অ্যাডিনো ভাইরাস বাসা বাঁধছে। কাশি সারছে না অনেকদিন, কারণ বোঝা যাচ্ছে না। এর কারণ অ্যাডিনো ভাইরাস কি না, তা জানার জন্য টেস্ট করতে হবে। প্রসঙ্গত, কেউ অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত কি না, তা জানতে পিসিআর টেস্ট করতে হয়।
নয়া নির্দেশিকা জারি করে স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে, অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন, ইনফ্লুয়েঞ্জা লাইক ইলনেসে আক্রান্ত হওয়ার মতো উপসর্গ থাকলে এবং সিভিয়র অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন আক্রান্ত শিশুদের অবশ্যই আরটি পিসিআর পরীক্ষা করতে হবে। চিকিৎসকরা বলছেন, আক্রান্ত হচ্ছে ১ থেকে ৪ বছর বয়সী শিশুরা। জ্বর, গলা ব্যথা, ফুসফুসে সংক্রমণ, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, ডায়েরিয়া, বমি, পেট ব্যথা, মূল সমস্যা শ্বাসকষ্টর মতো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। নয়া নির্দেশিকায় জানান হয়েছে, হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক ভেন্টিলেটর প্রস্তুত রাখতে হবে। শিশুবিভাগে পর্যাপ্ত বেড রাখতে হবে। কোনও হাসপাতালে শিশু বিভাগ না থাকলে, তা তৈরি করতে হবে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে হবে। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে রোজ কত রোগী আসছেন, স্বাস্থ্য ভবনকে জানাতে হবে।
উল্লেখ্য, অ্যাডিনো ভাইরাসটি একধরনের ডিএনএ ভাইরাস। ১৯৫৩ সালে এই ভাইরাসটি মানুষের নাক ও মুখের মাঝে অবস্থিত অ্যাডিনয়েড গ্ল্যান্ড থেকে পাওয়া গিয়েছিল। সারা পৃথিবীজুড়েই অ্যাডিনোর বিস্তার। প্রকৃতির মধ্যেই এই ভাইরাসটি বেঁচে থাকে, তাই মানুষ খুব সহজেই এই ভাইরাসের কবলে পড়েন। মানুষ থেকে মানুষে এবং প্রকৃতি থেকেও এই ভাইরাস সরাসরি শরীরে আসতে পারে। ক্যান্সারের কেমো থেরাপি চলছে, স্টেরয়েড ওষুধ খেতে হয়, ব্রঙ্কাইটিস আছে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, বাচ্চা, বয়স্কসহ অন্যান্য কোনও কারণে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কমে গেলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
অ্যাডিনো ভাইরাসের সবচেয়ে ক্ষতিকর সেরোটাইপ অ্যাডিনো-৭-এর সঙ্গে কোভিডের ভাইরাস সার্স কোভ-২-এর মিল রয়েছে। এই ধরনের ভাইরাসের উপস্থিতিতে কোষ থেকে সাইটোকাইন ও কেমোকাইন জাতীয় প্রোটিন নিঃসরণ বেড়ে যায়। তাতে কোভিডের মতোই দেহে সাইটোকাইন ঝড় শুরু হতে পারে। ফলে নিউট্রোফিল, বেসোফিল, ম্যাক্রোফ্যাজের মতো প্রতিরোধী কোষগুলি এক জায়গায় জড়ো হয়ে শরীরে প্রদাহ তৈরি করে। সর্দির পাশাপাশি মাথাচাড়া দিচ্ছে শুকনো কাশি। তাই বিপদ এড়াতে করোনার মতোই মাস্ক পরা ও ভিড় এড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। অ্যাডিনো ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না প্রাপ্তবয়স্করাও। বয়স্কদের ক্ষেত্রে কোমর্বিডিটি থাকলে সমস্যা আরও বাড়ছে।