বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

মুখের আদল ঠিক যেন দুর্গা, শ্রীরামপুরের দ্বিশতাব্দী প্রাচীন শীতলা পুজো

February 26, 2023 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বসন্তকালে শীতলার আরাধনায় মাতে বাংলা। শ্রীরামপুরের চাতরায় দু’শো বছর ধরে চলছে শীতলার আরাধনা। মায়ের পুজো উপলক্ষ্যে মেলাও বসে। গোটা বাংলা থেকে মানুষজন এখানে আসেন। ঐতিহাসিকরা বলেন, বাংলা ১২৬০ সন থেকে এখানে শীতলা দেবীর আরাধনা শুরু হয়েছিল। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আজও পুজো হয়ে আসছে। শুধু শ্রীরামপুর বা হুগলী জেলা নয়, বাংলার বিভিন্ন জায়গা, হাওড়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা, নদিয়া, বর্ধমান থেকে কাতারে কাতারে মানুষ এ সময় চাতরায় পুজো দিতে আসেন। চাতরায় শীতলা মায়ের পুজো নিয়ে কিংবদন্তি প্রচলিত রয়েছে। শোনা যায়, একদা চাতরায় বসন্ত রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। সে’সময় মহামারীর আকার ধারণ করে বসন্ত। পরিত্রাণ পেতে সাধক রাম দাস মা শীতলার পুজো শুরু করেন। জনশ্রুতি অনুযায়ী, মহামারি ঠেকাতে স্বপ্নাদেশ পেয়ে তিনি শীতলা পুজোর প্রচলন করেন। তারপর দেবী শীতলা সন্তুষ্ট হতেই, চাতরা মহামারীর কবল থেকে রক্ষা পায়।

ফাল্গুন মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে এখানে পুজো হয়। বাংলার অনেক জায়গায় কেবল এই অষ্টমীর দিনেই শীতলা পুজো হয়। অষ্টমীর দিনে দেবীকে নিবেদন করা হয়, ঘিয়ে ভাজা লুচি, বিনা তেল-হলুদের, ঘি-শুকনো লঙ্কা ফোড়নের আলুর তরকারি। তরকারির স্বাদ অমৃতের সমান। যারা ভোগ পান তারা বলেন, এই স্বাদের তুলনা হয় না।সপ্তমীতে রাত জেগে অষ্টমী তিথিতে মন্দিরে জল ঢালেন হাজার হাজার মানুষ। স্থানীয়রা বলেন, শীতলা মায়ের পুজো তাদের কাছে দুর্গা পুজোর মতো। দেবী দুর্গার আদলে শীতলা মায়ের মুখের গড়ন, টানা টানা চোখ। হলুদ বর্ণ। সখীরা মায়ের চারপাশে। সোনার গয়নায় মাকে সাজানো হয়। শতাব্দী প্রাচীন শীতলা মায়ের পুজোকে ঘিরে কয়েক দিন মেতে ওঠে শ্রীরামপুর চাতরা। দেড় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিরাট মেলা বসে। বাদাম ভাজা, জিলিপি, খাজা-গজা, ঘর-সংসারের টুকিটাকি থেকে সাজপোশাক, হরেকরকম পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। সাত দিনের মেলায় হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমে, দেদার বিকিকিনি চলে।

শ্রীরামপুরের চাতরা নিবাসীদের কাছে শীতলা মায়ের পুজো দুর্গা পুজোর সমতুল্য। ফি বছর ফাল্গুন-চৈত্র মাসে তিথি মেনে পাঁচ দিন ধরে চলে শীতলা মায়ের আরাধনা চলে। মূল পুজো হয় অষ্টমীতে। ভক্তরা সকাল থেকে উপোস করে মায়ের বেদিতে জল ঢেলে পুজো দিয়ে ব্রত ভাঙেন। অনেকে দন্ডিও কাটেন। মন্দিরের সামনে থেকে পুজো দেওয়ার জন্য ভক্তদের লম্বা লাইন পড়ে যায়। চাতরার এই শীতলা মায়ের মুখ, সাবেকি দুর্গার আদলে নির্মিত। দশমী পুজোর পরে মায়ের বিসর্জন হয়। ডাবের উপরে সিঁদুর লেপে রুপোর চোখ বসিয়ে সারা বছর মায়ের মন্দিরে পুজো হয়। মন্দির ট্রাস্টি বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে শীতলামায়ের পুজো হচ্ছে। পুজোর এক সপ্তাহ আগে থেকেই গোটা চাতরা এবং আশেপাশের বাসিন্দারা নিরামিষ খাবার খান। দুর্গাপুজোর মতো তিথি-নক্ষত্র মেনে ষষ্ঠী থেকে মায়ের পুজো শুরু হয়, তা দশমী পর্যন্ত চলে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Durga Idol, #Shitala Puja, #Serampore

আরো দেখুন