আরও নিঃস্ব হল বিশ্ব ফুটবল! চিরনিদ্রায় কিংবদন্তি ফরাসি ফুটবলার জ্যঁ ফঁতে
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বাদ রইলেন শুধু ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। হিসেবটা সবার জন্য নয়। এই হিসেব নব্বই দশকে বেড়ে ওঠা প্রজন্মের। যাঁদের কাছে ইন্টারনেট ছিল না। ক্লিক করলেই খেলার জগৎ হাতের মুঠোয় আসেনি। চোখ রাখতে হয়েছে বিভিন্ন সাময়িকী কিংবা তা না হলে বাংলাদেশের ডায়েরি। ইউরোপের ক্লাব ফুটবল তখনো এই দেশে এত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। আগ্রহটা বিশ্বকাপ ফুটবলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। সেই আগ্রহের খোরাক মেটাতে গিয়ে কিশোর চোখগুলো বারবার চারটি নামে আটকে গেছে— পেলে, ডিয়েগো মারাদোনা, জ্যঁ ফঁতে (Just Fontaine) ও ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার।
এই তো ২০২০ সালে চলে গেলেন মারাদোনা। পেলে তাঁর সঙ্গে যোগ দিলেন গত ডিসেম্বরে। জ্যঁ ফঁতের মনটা কি তখন থেকেই উড়ু উড়ু করছিল? আজ ৮৯ বছর বয়সে জ্যঁ ফঁতে চলে গেলেন অন্যলোকে, পেলে-মারাদোনাদের কাছে। একা রেখে গেলেন বেকেনবাওয়ারকে!
১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে ফরাসি তারকা জ্যঁ ফঁতের ১৩ গোলের রেকর্ড আজও অম্লান। এক বিশ্বকাপে সব চেয়ে বেশি গোল করার নজির তাঁরই। মাত্র ৬টি ম্যাচে ১৩টি গোল করেছিলেন জ্যঁ ফঁতে। ১৯৫৩ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত দেশের জার্সিতে সেই ২১টি ম্যাচে ৩০টি গোল করেছিলেন তিনি। চোট আঘাতে জর্জরিত নামী তারকা ২৮ বছরেই অবসর নিয়েছিলেন।
ফরাসি তারকা তিনটি ক্লাবের হয়ে খেলে ২৫০টি গোল করেছিলেন। তিনি ছিলেন ফ্রান্সের গোলমেশিন। সেইসময় সর্বোচ্চ গোলের মালিক হয়ে কোনও পুরস্কারও পাননি। সেই নিয়ে আক্ষেপও করেছিলেন। এও বলেছিলেন, আমার করা রেকর্ড কারও পক্ষে ভাঙা সম্ভব নয়।
রেকর্ডটি কেউ ভাঙতে পারেনি, কখনো ভাঙবে কি না তা নিয়েও সন্দেহ পোষণ করেন কেউ কেউ। সেই সন্দেহে যুক্তিও আছে। মাত্র তিনজন ফুটবলার বিশ্বকাপে ফন্টেইনের চেয়ে বেশি গোল করেছেন— জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোসে (১৬), ব্রাজিলের রোনাল্ডো (১৫) এবং জার্মানির গার্ড মুলার (১৪)।
১৯৫৮ সালের সেই বিশ্বকাপে ফ্রান্স ৬-৩ গোলে হারিয়েছিল পশ্চিম জার্মানিকে। তৃতীয় স্থানের সেই ম্যাচে ফঁতে চারটি গোল করেছিলেন। ১৯৮০ সালের আফ্রিকান কাপ অফ নেশনসে মরক্কো তৃতীয় স্থান পেয়েছিল ফঁতেরই কোচিংয়ে। গোল করে বিশ্বকাপ রাঙিয়ে দেওয়ার জন্যই ফঁতেকে চিরকাল মনে রাখবেন ফুটবলপ্রেমীরা।
নব্বইয়ের প্রজন্মের কথা আলাদা করে বলতে হচ্ছে কারণ, শৈশবে এই চারজনের নাম শুনতে শুনতে অবচেতন মনেই তাঁরা কীর্তিমানের আসন পেয়েছিলেন। নামগুলো শুনলেই মনে হতো তাঁরা রক্ত–মাংসের মানুষ হয়েও রূপকথার নায়ক। মেয়াদ পূরণ হওয়ায় ভোরের শিউলি ফুলের মতো ‘নায়কেরা’ এখন ঝরে পড়ছেন। আর নব্বইয়ের প্রজন্ম থেকে বাকি সব প্রজন্মের ভক্তরাও যেন সেসব ‘শিউলি’ কুড়িয়ে জমা রাখছেন মনের গোপন কুঠুরিতে। আজ তেমনই একটি ‘শিউলি’ জমা পড়ল— জ্যঁ ফঁতে!