মেঘালয়ে ‘মোদী ম্যাজিক’ কাজ করল না, ত্রিপুরায়ও আসন কমল বিজেপির
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: লোকসভা নির্বাচন হতে আর একটা বছরও বাকি নেই। ইতিমধ্যেই ঘুঁটি সাজাতে শুরু করে দিয়েছে সব রাজনৈতিক দল। কেন্দ্রে মোদী বিরোধী জোট গঠন নিয়ে অনেকদিন ধরেই একটা তৎপরতা চলছে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে। তবে এই রাজ্যে বিজেপিকে আটকাতে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে কংগ্রেস-সহ বামপন্থী দলগুলি হাত মেলাবে কী না তা নিয়েও অনেকের মধ্যে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। বিশেষত সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের সাধারন সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য এই প্রসঙ্গটি উত্থাপন করার পর থেকে।
কিন্তু বৃহস্পতিবার তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিস্কার ভাবে বলে দিয়েছেন, কোনও রাজনৈতিক জোট নয়, মানুষের জোটের উপরই আস্থা রাখছেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল আর মানুষের জোট হবে। আমরা ওদের (বাম এবং কংগ্রেস) কারও সঙ্গে যাব না। একা লড়ব মানুষের সমর্থন নিয়ে।’’
সম্প্রতি মেঘালয়ে নির্বাচনের প্রচারে গিয়ে তৃণমূলের ‘ইতিহাস’ তুলে ধরে খোঁচা দিয়েছেন রাহুল গান্ধী। ফলে সংঘাতের সুর আরও চড়া হয়েছে। বিজেপিকে হারাতে কংগ্রেস ব্যর্থ। তৃণমূলই বিজেপির একমাত্র বিকল্প বলে প্রচার করছে জোড়াফুল শিবির। তার জেরেই বিজেপি বিরোধী জোট ঘিরে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোটের ফলাফলেও দেখা গেল মাত্র কয়েকমাসের প্রস্তুতিতে তৃণমূল পাঁচটি আসনে জয়লাভ করেছে। সেখানে শতাব্দী প্রাচীন কংগ্রেসও পেয়েছে পাঁচটি আসন!
এদিন প্রাথমিক ট্রেন্ডে ডবল ফিগার ছুঁলে যত বেলা গড়িয়েছে, মেঘালয়ে ততই পায়ের তলা থেকে জমি সরেছে বিজেপির। বিজেপিকে ‘খ্রিষ্ঠান বিরোধী’ দল আখ্যা দিয়ে এবার প্রচারে নেমেছিল তাদেরই জোটসঙ্গী এনপিপি। তবে সেই তকমা দূরে সরিয়ে মেঘালয়ে ভালো ফল করতে মরিয়া ছিল বিজেপি। আর তাই একক ভাবে ৬০টি আসনেই প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনী ময়দানে নেমেছিল গেরুয়া শিবির। প্রচারে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই রাজ্যের বিজেপি প্রধান আর্নেস্ট মাওরি এও বলেছিলেন যে তিনি নিজে গোমাংস খান। তবে খ্রিষ্ঠান বিরোধী তকমা ঘুচিয়ে এই রাজ্যে সেভাবে দাগ কাটতে ব্যর্থ হল বিজেপি। শুধু তাই নয়, রাজ্য সভাপতি আর্নেস্ট মাওরি নিজেও ভোটে হেরে যান।
আর্নেস্ট মাওরি পশ্চিম শিলং কেন্দ্র থেকে ভোটে লড়েছিলেন। সেই আসনে ইউডিপি পল লিংডোর কাছে হারতে হয় তাঁকে। ইউডিপি প্রার্থী পান ৪২.১৪ শতাংশ। এই আসনে বিজেপি প্রার্থী তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। আর্নেস্টের আগে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন এনপিপির মহেন্দ্রো রাপসাং। এনপিপি প্রার্থী পান ২৩.৫৯ শতাংশ ভোট। এদিকে বিজেপির রাজ্য সভাপতির ঝুলিতে যায় ২০.০৭ শতাংশ ভোট। এই আনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ইওয়ান মারিয়া পান মাত্র ১৯৪ ভোট।
সার্বিক ভাবে মেঘালয়ে মাত্র ২টি আসন জেতে বিজেপি। সেখানে তৃণমূল জেতে পাঁচটি আসনে। সেই অর্থে তৃণমূলের কাছে ‘হারতে’ হয়েছে বিজেপিকে। এদিকে মেঘালয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল না কোনও দল। একক বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে এসেছে এনপিপি। এনপিপি ২৫টি আসন জিতেছে। এই রাজ্যে বিজেপি পায় মাত্র ৯.৩ শতাংশ ভোট। কংগ্রেস ও তৃণমূল পায় ১৩ শতাংশের বেশি ভোট।
অন্যদিকে, ত্রিপুরায় জয় এলেও, প্রত্যাশা পূরণ হল না বিজেপির। ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা দাবি করেছিলেন, ত্রিপুরায় বিরোধীশূন্য বিধানসভা হবে। ত্রিমুখী লড়াইয়ে কোনওমতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে পদ্ম-জোট। কিন্তু আসন গত বারের তুলনায় কমেছে। দল এবং জোট, কমেছে দুইয়েরই ভোট। মুখ্যমন্ত্রী মানিক হাজারের একটু বেশি ভোটের ব্যবধানে জিতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন। হেরে গিয়েছেন উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা, রাজ্য বিজেপির সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্যের মতো প্রথম সারির নেতারা।
৬০ সদস্যের ত্রিপুরা বিধানসভায় বিজেপি এ বার ৫৫টিতে লড়ে ৩২টি আসনে জিতল। সহযোগী আইপিএফটি ৬টি লড়ে মাত্র ১টিতে। বিজেপির ঝুলিতে গিয়েছে প্রায় ৩৯ শতাংশ ভোট। সঙ্গী আইপিএফটি এ বার ভোট পেল মাত্র ১.২ শতাংশ। ২০১৮ সালের বিধানসভা ভোটের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ ভোট কমে গিয়েছে বিজেপি জোটের।
নাগাল্যান্ডে গত বিধানসভা ভোটের পর জোট সরকার গড়েছিল স্থানীয় দল এনডিপিপি এবং বিজেপি। এ বারও দুই দলের প্রাপ্ত আসন একত্রে সরকার গঠনের ‘জাদুসংখ্যা’ পেরিয়ে গিয়েছে।
সাগরদিঘিতে উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী জয়লাভ করেছে। তৃণমূলের এই হারকে শাসকদলের কাছে বিরাট ধাক্কা হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করছে বিরোধীরা। বলা হচ্ছে সংখ্যালঘুদের আস্থা হারিয়েছে তৃণমূল। আবার শাসকদল হার মেনে নিলেও পালটা যুক্তি দিচ্ছে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, সাগরদিঘিতে বাম এবং কংগ্রেসের অনৈতিক জোট হয়েছে। বিজেপি নিজেদের ভোট কংগ্রেসে পাঠিয়ে কংগ্রেসকে জিতিয়ে দিয়েছে।