প্রথা মেনে গৌরাঙ্গ মন্দিরে আয়োজিত হল মহাপ্রভুর অন্নপ্রাশন উৎসব
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: দোলপূর্ণিমা হল চৈতন্যদেবের জন্মতিথি। প্রথা মেনে, দোল উৎসবের পর দিন মহাপ্রভুর অন্নপ্রাশন উৎসব হয়। সেই মতো মহাপ্রভুর অন্নপ্রাশন ঘিরে উন্মাদনায় মাতল নবদ্বীপ। গোটা মন্দির চত্বর, নাটমন্দির ফুল ও মালায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে। স্থানীয় এবং বাইরে থেকে আসা ভক্ত, পুণ্যার্থী এবং পর্যটকদের ভিড়ে নবদ্বীপ হয়ে ভেসে গিয়েছে জনসমুদ্রে।১০ থেকে ১২ হাজার ভক্তের জন্য প্রসাদের আয়োজন করা হয়েছিল। এবারের অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠানে বৃন্দাবনের রাধাকুণ্ড থেকে বৈষ্ণবরা এসেছেন। পণ্ডিত প্রবর বৈষ্ণবপদ দাস বাবাজি মহারাজও এসেছেন।
প্রতিবছরই অন্নপ্রাশন অনুষ্ঠিত হয়। অন্নপ্রাশন উপলক্ষ্যে গৌরাঙ্গ মন্দিরে মহাপ্রভুকে রুপোর বাঁশি, লাল চেলি, উত্তরীয়, পৈতেতে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল। অন্নপ্রাশনের মূল আকর্ষণ হল অধিবাস, মহাপ্রভুকে ষোলটি উপকরণের মাধ্যমে অধিবাসে আমন্ত্রণ করা হয়। ষোলটি উপাদানের মধ্যে থাকে দুধ খাওয়ানোর রুপোর ঝিনুক বাটি, ঝুমঝুমি, সোনার বল, চুষনি কাঠি, কাজললতা, হাতের বালা, পায়ের মলসহ বিভিন্ন খেলনা ও ধর্মগ্রন্থ গীতা, ভাগবত। তিন কুইন্টাল চালের অন্ন, এক কুইন্টাল পুষ্পান্ন, ছাপ্পান্ন রকমের ভাজা, শাক, ব্যাঞ্জন, কুল, আম, আমসত্ত্ব, রসগোল্লার চাটনি ইত্যাদি ভোগ দেওয়া হয়। সরপুরিয়া, ল্যাংচা, সরভাজা, ছানার পায়েস, রাবরি, রসমালাই ইত্যাদিসহ ৫৬ রকমের মিষ্টি ১০৮টি প্লেটে সাজিয়ে দেওয়া হয়। কৃষ্ণনগরের সরপুরিয়া, মুর্শিদাবাদের ছানার বড়া ও শক্তিগড়ের ল্যাংচা আনা হয়েছে।
অন্নপ্রাশন উপলক্ষ্যে সকাল থেকে উপবাসে থাকেন বিষ্ণুপ্রিয়ার বংশধররা। উপবাস অবস্থায় তাঁরা কাঠের উনুনে গঙ্গার জল দিয়ে ভোগ রান্না করেন। কচুর শাক, ভাজা, শুক্তো, ডাল, মোচার ঘণ্ট, ছানার রসাসহ বিভিন্ন রকমের তরকারি রান্না করা হয়। নাটমন্দির চত্বরে মেঝেতে অন্ন, পুষ্পান্ন পাহাড়ের আকার সাজিয়ে দেওয়া হয়। চারপাশে থরে থরে বিভিন্ন থালায় আলাদা আলাদা করে পদ সাজিয়ে দেওয়া হয়। নাটমন্দির পর্যন্ত লাল কাপড় বিছিয়ে দেওয়া হয়। তার উপর ছড়িয়ে দেওয়া হয় গোলাপের পাপড়ি। নহবতের সুর আর ব্যান্ড, সেই সঙ্গে খোল করতাল বেজে ওঠে। মহাপ্রভুর পূজার্চনা, ভোগ আরতি শুরু হয়।
নবদ্বীপ গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু মন্দিরের অন্যতম সেবায়েত তথা বিষ্ণুপ্রিয়া সমিতির সভাপতি সুদিন গোস্বামীর কথায়, বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর পরিবারের সদস্যরা পূর্বপুরুষদের রীতি মেনেই গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর অন্নপ্রাশন পালন করে চলেছেন। শিশুর অন্নপ্রাশন মতোই চৈতন্যদেবের অন্নপ্রাশন হয়।