ভারতে প্রতিদিন অন্তত ১২ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে হার্ট অ্যাটাকে অথবা ব্রেন স্ট্রোকে!
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: জিম করতে গিয়ে, খেলতে গিয়ে মৃত্যু এখন সাধারণ ঘটনা হয়ে গিয়েছে। প্রচুর মানুষের এই সমস্যা হচ্ছে। এমনকী তারকারাও ছাড় পাচ্ছেন না। তালিকায় কমেডিয়ান এবং অভিনেতা রাজু শ্রীবাস্ততব থেকে সিদ্ধার্থ বীর সূর্যবংশী রয়েছেন।
চলতি মাসের শুরুতেই হায়দরাবাদের লালাপেট-এর এক স্টেডিয়ামের ব্যাডমিন্টন কোর্টে খেলার ফাঁকেই লুটিয়ে পড়েন ৩৮ বছরের শ্যাম যাদব। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, শ্বাস নিতে পারছিলেন না ওই ব্যক্তি। প্রবলভাবে হাঁফাচ্ছিলেন। পরে ৩৮ তাঁর মৃত্য হয়। অফিস থেকে ফেরার পর প্রত্যেক দিনই ব্যাডমিন্টন খেলতেন। পরে জানা যায়, ওই ব্যক্তি আচমকা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
২০০৫ সাল। ব্যাডমিন্টন খেলছিল ফুলের মতো ফুটফুটে ন’বছরের মেয়েটি। হঠাৎই বুক চেপে বসে পড়ল। পরের এক সপ্তাহ যুদ্ধ চলল যমে- মানুষে। মেয়েটির হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। পরের তিনদিন শিশু চিকিৎসকরা প্রায় যুদ্ধ চালালেন তাকে স্থিতিশীল করতে। তারপর বাইপাস সার্জারির জন্য অপারেশন থিয়েটারের টেবিলে তোলা হল তাকে।
২০১৯ সাল। বাইপাসের ধারে একটি হাসপাতালে অসম্ভব বুকে ব্যথা নিয়ে ভর্তি হলেন ভাঙড়ের এক যুবক। সার্জারির জন্য তাঁর চেস্ট ওপেন করতেই ‘থ’ হয়ে গেলেন চিকিৎসকরা। হার্টের ধমনীগুলি যেন দলা পাকিয়ে আছে। প্রধান প্রধান ধমনীগুলি পর্যন্ত ইটের মতো শক্ত। অন্তত কয়েকটা বাইপাস করলে তবে ওই যুবককে বাঁচানো যাবে। কিন্তু অত শক্ত ধমনীতে করা গেল মোটে একটা বাইপাস!
৪ মার্চ, ২০২৩। নিজের ইনস্টা অ্যাকাউন্টে বিশ্বসুন্দরী সুস্মিতা সেনের পোস্ট। সবাইকে স্তম্তিত করে জানালেন, ক’দিন আগেই ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয়েছে তাঁর। মহাধমনীতে ৯৫ শতাংশ ব্লক ছিল। অ্যাঞ্জিওপ্ল্যাস্টি করে স্টেন্ট বসানো হয়েছে বুকে। পুরোদস্তুর ফিট, ছিপছিপে, রোজ জিম করা সুস্মিতাও কি না মাত্র ৪৭ বছর বয়সে হার্ট অ্যাটাকের কবলে পড়লেন! অবাক সকলে। হয়তো বা সেই ফিটনেসের জন্য এত বড় বিপদ আপাতত কাটিয়ে উঠেছেন বিশ্বসুন্দরী। কিন্তু কে কে (৫৩), সিদ্ধার্থ শুক্লা (৪০), পুনিত রাজকুমাররা (৪৬) অত ‘ভাগ্যবান’ ছিলেন না!
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চমকে দেওয়া পরিসংখ্যান হল, ভারতে রোজ যত মানুষ মারা যায়, তার ২৭ শতাংশের মৃত্যুর কারণ হার্ট অ্যাটাক ও ব্রেন স্ট্রোক (কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ)। সংখ্যার হিসেবে রোজ অন্তত ১২ হাজার। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই ১২ হাজারের মধ্যে ৭৫-৮০ শতাংশ মৃত্যুরই কারণ হার্ট অ্যাটাক। বাকিটা ব্রেন স্ট্রোক। অর্থাৎ দেশে রোজ শুধু হার্ট অ্যাটাকের বলি হচ্ছেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। এ থেকে উঠে আসছে গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো আর একটি তথ্য। প্রতি রাতে দেশে হার্ট অ্যাটাকের শিকার হচ্ছে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ (যাঁদের হার্ট অ্যাটাক হয়, তাঁদের ১০-১৫ শতাংশ মারা যান)।
বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অরূপ দাসবিশ্বাস বলেন, ‘হার্ট অ্যাটাক হওয়ার বয়স কমছে। অল্পবয়সিদের হার্ট অ্যাটাকের বৈশিষ্ট্য হল, সিংহভাগ ক্ষেত্রে কোনও লক্ষণই থাকে না। ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয়। তাই পরিবারে হার্টের রোগের ইতিহাস থাকলে অত্যন্ত সতর্ক হন।’ বিশিষ্ট হার্ট সার্জেন ডাঃ কুণাল সরকার বলেন, ‘শরীর-স্বাস্থ্য নিয়ে নিজেকে কখনও হিরো ভাববেন না। কার যে কখন কী হয়! আজই ধূমপান ছাড়ুন। পরিবারে হার্টের রোগ ও সুগারের ইতিহাস থাকলে অবশ্যই তিরিশের পর থেকে বছরে একবার রুটিন পরীক্ষা করান।’
এই প্রসঙ্গে কলকাতার বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা: রুদ্রজিৎ পাল বলেন, হার্ট অ্যাটাকের সংখ্যা বাড়ছে। এই বছরেই বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন কেবল এই অসুখে আক্রান্ত হয়ে। এই কারণে সচেতনতা প্রয়োজন। নিজের হৃৎপিণ্ডের দিকে খেয়াল না রাখলে সমস্যা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে।