নিশকাইন্দা পুজো: দেবতাদের পাশাপাশি পূজিত হন অপদেবতারাও!
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: হাজারও দেব-দেবী, লৌকিক দেবতাদের পাশাপাশি পূজিত হন অপদেবতারাও। ঠিক তেমনই একজন হলেন নিশকাইন্দা। মূলত নিশকাইন্দা থানে পূজিত হন। হাত-পা চারদিকে ছড়িয়ে, উবু হয়ে শুয়ে থাকেন তিনি। মূলত গাছের তলায় নিরিবিলি জায়গায় তাঁর থান হয়। সচরাচর দেবদেবীর যে ধরণের মূর্তি দেখা যায়, নিশকাইন্দার মূর্তি কিন্তু মোটেও তেমন নয়! একেবারেই আলাদা। কোনও বেদি নেই, মন্দির বা কোনও ছাউনি কিছুই নেই। খোলা আকাশের নীচে মাটির ওপর মাটি দিয়েই তৈরি মূর্তি। ঢিবির মতো উত্তর-দক্ষিণে প্রসারিত, চতুষ্পদ প্রাণীর অবয়বে তৈরি করা হয় মূর্তি। দৈর্ঘ্যে প্রায় ৩০ ফুট, উচ্চতায় ৬ ফুট। মাথা উত্তরে, অনেকটা ত্রিভুজ আকারের। চোখ, মুখ স্পষ্ট করে কিছু নেই। সামনের দিকে সিঁদুর মাখানো একটি কাঠের গজাল পোঁতা থাকে। দুই পাশে মাটি দিয়েই দুটো করে এবং মাঝখানে একটি রিং তৈরি করা হয়। তাতে লাল হলুদ রঙ করা থাকে। এগুলোই সম্ভবত চোখ, নাক। পিঠের উপরিভাগ সমতল। সেখানেও কয়েকটি রেখা টানা হয়। হাত-পায়েও লাল-হলুদ রঙের মাটির বালা পরানো থাকে।
আদপে নিশকাইন্দা অপদেবতা। মনে করা হয়, দেবাদিদেব মহাদেব কোনও এক কালে নিশকাইন্দা রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। মূর্তি অনেকটা সিংহের আকৃতির। চড়ক পুজোর সময় নিশকাইন্দার পুজো করা হয়। প্রতিবছর চৈত্রসংক্রান্তির দিন পুজো শুরু হয়, যা তিন দিন ধরে চলে। এছাড়াও সারা বছর সন্ধ্যায় নিশকাইন্দার থানে মোমবাতি জ্বালানো হয়। বাতাসা ভোগ দেওয়া হয়। নিশকাইন্দা পুজোর চল ওপার বাংলায় প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। নিশকাইন্দাই এপার প্রচুর হয়ত নিশিকান্ত নামে পরিচিত হয়েছে।
নিশিকান্তও অপদেবতা। নদিয়ার ফুলিয়ায় নিশিকান্তের থান রয়েছে। তবে বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার বামনকুইটা গ্রামে নিশিকান্তর পুজো শুরু হয়েছিল। সেই গ্রামের বসাক পরিবার কয়েক শতাব্দী ধরে নিশিকান্তের পুজো করতেন। দেশভাগের পর তাঁরা নদীয়ায় চলে যান। সেখানে নিশিকান্তর পুজোর প্রচলন করেন। নদীয়ার নিশিকান্তের মূর্তির ছবির সঙ্গে নিশকাইন্দার মূর্তির মিল রয়েছে। বহু লৌকিক দেবতা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছেন, কিন্তু হারিয়ে যাওয়ার কবল থেকে টিকে গিয়েছেন কেউ কেউ। আজও ভয়ে ভক্তিতে এখনো পূজিত হচ্ছেন নিশকাইন্দা।