সংসদে চলতি অধিবেশনে BJP সরকারের আচরণ গণতন্ত্রের সজ্ঞা বদলের ইঙ্গিত দিচ্ছে?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: গত সপ্তাহের অধিকাংশ সময়ই সংসদের দুটি কক্ষ অচল ছিল। ভারতের সংসদের কাজকর্ম সাংসদদের বাকবিতন্ডায় বানচাল হয়ে যাচ্ছে, তার মধ্যে অস্বাভাবিকতার কিছু নেই। গোটা বিশ্বেই আইনসভাগুলিতে বিশৃঙ্খলতার ঘটনা একই।
দু-একটা উদাহরণ দেওয়া যাক- ২০১২ সালে, কানাডার আইনসভার নিম্নকক্ষে বাজেট বিল নিয়ে বিরোধীদের সঙ্গে সরকারপক্ষের সদস্যদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল।
২০১৫ সালে জাপানি সৈন্যদের বিদেশে যুদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া সংক্রান্ত একটা বিল জাপানের আইনসভায় শারীরিক বল প্রয়োগ করে আটকানোর চেষ্টা করেছিল বিরোধীরা।
২০১৬ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকার সংসদ থেকে বিরোধী সাংসদদের জোরপূর্বক বহিষ্কার করা হয়েছিল। কারণ, তাঁরা রাষ্ট্রপতির একটি বক্তৃতায় ব্যাঘাত ঘটানোর চেষ্টা করেছিলেন।
তবে গত সপ্তাহে ভারতের সংসদে যা ঘটল তা নজিরবিহীন। আইনসভার কাজ প্রায় সবসময়ই ব্যহত হয় বিরোধীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের দরুন। আইনসভার গণতান্ত্রিক অধিকারকে ব্যবহার করে বিরোধীরা সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করে। কিন্তু এবার এক নাটকীয় ঘটনার সাক্ষী থাকল ভারতের সংসদের উভয় কক্ষ। সংসদের কাজকর্ম ব্যহত হল সরকার পক্ষের জন্যই!
কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা ভারতীয় জনতা পার্টি’র দাবি, রাহুল গান্ধী ব্রিটেন সফরের সময় ভারতীয় গণতন্ত্রকে খাটো করেছেন, তার প্রতিবাদ করার জন্য তারা সংসদের কাজকর্মে বাধা দিচ্ছে। ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এর জন্য রাহুল গান্ধীকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি করেছে। তা না হলে রাহল গান্ধীকে সংসদ থেকে সাসপেন্ড করা উচিত বলে মনে করছে তারা। অধিবেশন চলাকালীন বিরোধী সাংসদদের মাইক্রোফোনগুলিও বন্ধ করে রাখা হয়েছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে বিজেপি একটা কৌশল নিয়েছে। তারা রাহুল গান্ধীর ইস্যুটাকে ধরে সংসদ অচল করে আসলে আদানী গ্রুপের ‘আর্থিক কেলেঙ্কারি’ নিয়ে আলোচনা এড়িয়ে যেতে চাইছে। মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গ যে বিষয়টিকে সামনে এনেছিল।
বিজেপি’র স্বল্পমেয়াদী এই রাজনৈতিক কৌশল যেখানে সরকার পক্ষই সংসদ অচল করে রাখছে, তা ভারতীয় গণতন্ত্র সম্পর্কে এই চরম সত্যের দিকে ইঙ্গিত করে:
দেশের আইনসভাগুলো এখন অনেকটাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। গণতন্ত্রে সরকারকে সংসদ চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং বিরোধীরা বিভিন্ন ইস্যুতে প্রশ্ন তুলে মাঝেমধ্যেই বিব্রত করার চেষ্টা করে। তবে এখন এটা স্পষ্ট, বিজেপি এই মুহূর্তে বিরোধীদের কোনও প্রশ্ন শুনতে বা তার জবাব দিতে রাজি নয়।
সংসদ বিশেষজ্ঞদের মতে গণতন্ত্রে সরকার পক্ষ যেমন থাকবে তেমনি বিরোধী পক্ষও থাকবে। একটি ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্স’ ব্যবস্থা থাকা জরুরি। সরকারের বিভিন্ন নীতি, সিদ্ধান্তের উপর বিরোধীরা প্রশ্ন তুলতেই পারে। সুস্থ্য গণতন্ত্রে সেটাই কাম্য। যখন এই বিষয়টি থাকে না তখন আর দেশে গণতন্ত্র থাকে না। শুরু হয় একনায়কতন্ত্র। ‘বিজেপি-র ভারত’ কি তাহলে সেই পথে?