ধর্মের মিলনক্ষেত্র শ্রীচৈতন্যর নদীয়ার সিরাজউদ্দিন কীভাবে হলেন ভক্ত চাঁদকাজী?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: নদীয়া হল বহু ধর্মের মিলনক্ষেত্র, শ্রীচৈতন্যের স্মৃতিধন্য নদীয়ায় যেমন মিলিত হয়েছে শাক্ত ও বৈষ্ণব ধর্মমত। তেমনই সম্প্রদায়িকতা ভুলে মিলিত হয়েছে হিন্দু-মুসলমানও। যবন হরিদাসের কথা সকলের জানা কিন্তু মৌলনা সিরাজউদ্দিন আজও অজানা।
মায়াপুরের অনতি দূরে রয়েছে বামুনপুকুর। সেখানেই রয়েছে, হুসেন শাহর আমলের স্থাপত্য, যা চাঁদকাজীর সমাধি নামে পরিচিত। কিন্তু চাঁদকাজী কে? চৈতন্য ভক্তদের কাছে তিনি বহুল পরিচিত। মহাপ্রভুর জীবনী গ্রন্থতে চাঁদকাজীর উল্লেখ রয়েছে। চাঁদকাজীর আসল নাম ছিল মৌলনা সিরাজউদ্দিন। তিনি ছিলেন বামুনপুকুর সংলগ্ন অঞ্চলের শাসক এবং হুসেন শাহের শিক্ষক। প্রথম জীবনে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর ঘোরতর বিরোধী ছিলেন তিনি। তিনি নাম সংকীর্তন বন্ধের নির্দেশও দিয়েছিলেন। যদিও সে ফরমান অমান্য করে নিজের দল নিয়ে গিয়ে সিরাজউদ্দিনের বাড়িতে সংকীর্তন করেছিলেন মহাপ্রভু। একদা নাম সংকীর্তনের শোভাযাত্রা শেষে, দু’জনে তর্কযুদ্ধে বসেছিলেন। মহাপ্রভুর কথায় মুগ্ধ হন সিরাজউদ্দিন। তিনি চৈতন্য ভক্ততে পরিণত হন, চৈতন্য ভাবাদর্শে দীক্ষিত হয়ে তার নতুন নাম হয় চাঁদকাজী।
সেই চাঁদকাজীর সমাধিই রয়েছে বামুনপুকুরে। উঁচু ইটের গাঁথুনি ও লোহার গেট দিয়ে ঘেরা সমাধিক্ষেত্রে ঢোকার সময়ে চোখে পড়ে মূল প্রবেশদ্বারে বড় বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে, ভক্ত চাঁদকাজী সমাধি। সমাধির উপরে বিশালাকার শাখা-প্রশাখাযুক্ত গাছ রয়েছে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, চাঁদকাজীকে কবর দেওয়ার সময় এই গাছ লাগানো হয়েছিল। প্রায় ৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই সমাধি গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের কাছে এক পবিত্র তীর্থক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।