World Water Day: ভূগর্ভস্থ জলের ভাঁড়ার নিঃশেষিত হচ্ছে, পৃথিবী যে সংকটে
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: জলই জীবন। এই সত্যি বদল হয়নি এখনও পর্যন্ত। তবে তাই বলে সবাই যে সচেতন, এমনটাও নয়। অবিরাম পড়ছে ট্যাপকলের জল। রাস্তাঘাটে তো বটেই, বাড়িতেও এমন ভাবে জল অপচয় পরিচিত দৃশ্য। এই অসচেতনতা বিশেষজ্ঞদের চিন্তা বাড়াচ্ছে। তাঁরা বলছেন, ভূগর্ভস্থ জলের ভাঁড়ার ক্রমেই কমছে। জলের গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
আজ বিশ্ব জল দিবস। প্রতিবছর ২২ শে মার্চ বিশ্বজুড়ে পালিত হয় বিশ্ব জল দিবস। বর্তমানে জল সংকটের সম্মুখীন হয়েছে গোটা বিশ্ব, সেই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতেই জল দিবস পালন করা হয়। ১৯৯২ সালের ২২ ডিসেম্বর, বিশ্ব জলদিবস পালন করার প্রস্তাবটি রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে প্রথম গৃহীত হয়েছিল। ১৯৯৩ সালে ২২ মার্চ, বিশ্ব জলদিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয় এবং বিশ্বজুড়ে উদযাপন করা হয়।
শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্বেই ভূগর্ভস্থ জলস্তর নামছে তো নামছেই। সারা পৃথিবীর প্রায় ২৫ শতাংশ ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন করে ভারত। ভারত আর কিছুতে না হোক, এই ক্ষেত্রে আমেরিকা ও চিনের থেকে এগিয়ে রয়েছে। ভারতের ক্ষেত্রে ২০০২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ভূগর্ভস্থ জলস্তরের উচ্চতা কমেছে ভয়াবহ ভাবে, প্রতি বছরে ১০-২৫ মিমি। গড়ে ভারতের ভূগর্ভস্থ জলস্তর কমেছে ৫৪ শতাংশ। চিন্তার বিষয় হল, চাষ আবাদের ক্ষেত্রে ভারতে যে জল ব্যবহৃত হয়, তার ৭০ শতাংশের এর উৎস হল ভূগর্ভস্থ জল। তথ্য অনুসারে, যদি এই ভাবে ভূগর্ভস্থ জলস্তরের উচ্চতা কমতে থাকে, তাহলে ভারতের জনসংখ্যার ৪০ শতাংশের বেশি মানুষের জন্য পানীয় জলের গুরুতর সমস্যা হবে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি মোটেই আশাপ্রদ নয়। ইতিমধ্যেই প্রচুর মানুষ আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়েছেন। অনেক জায়গায়, যার মধ্যে কলকাতাও রয়েছে, যেখানে টিউবওয়েলের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ জলের উত্তোলন এক প্রকার নিষিদ্ধ।
বিশ্বের যেখানে যেখানে এখনও যথেষ্ট পরিমাণ ভূগর্ভস্থ জল সঞ্চিত রয়েছে, সেখানে প্রতি দিন এত বেশি পরিমাণ জল তোলা হচ্ছে, ফল হচ্ছে মারাত্মক। ভূগর্ভস্থ জলের ভাণ্ডারে টান পড়ছে, তেমনই সব মানুষের কাছে পরিশুদ্ধ জল পৌঁছে দেওয়াটা কঠিন হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি বাড়ছে ভূগর্ভস্থ জলের দূষণও। এমনটা বেশ কিছুকাল ধরে জানিয়ে আসছেন বিভিন্ন দেশের গবেষকরা।
গবেষকেরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, বিশ্বের পানযোগ্য জলের ৯৯ ভাগই জোগান দেয় ভূগর্ভে সঞ্চিত থাকা জল। সেই জলের ভাণ্ডারে টান পড়লে, কিংবা তা দূষিত হতে থাকলে, যেমন বাস্তুতন্ত্রের উপরে প্রতিকূল প্রভাব পড়বে, তেমনই ধাক্কা খাবে জনস্বাস্থ্য আন্দোলন।
গবেষকদের এই আশঙ্কা যে আমূলক নয় তার প্রমান সম্প্রতি কেন্দ্রের একটি রিপোর্টে মিলেছে। খুব দ্রুত ফুরিয়ে আসতে চলেছে দেশের ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ। আগামী ২৮ বছরের মধ্যে সারা দেশেই আরও বৃদ্ধি পাবে ব্যবহারযোগ্য জলের সঙ্কট। সংসদে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পেশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। একইসঙ্গে দিল্লি, গুরুগ্রাম, বেঙ্গালুরুর মতো দেশের মোট ১৩টি শহরকে চিহ্নিত করে বলা হয়েছে যে, ওইসব শহরে ভূগর্ভস্থ জল তোলার হার ১০০ শতাংশেরও বহু গুণ বেশি। যদিও তালিকায় বাংলার কোনও শহরের নাম নেই।
কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া তথ্য বলছে, ২০২৮ সালের মধ্যে গুরুগ্রাম, ২০৩১ সালের মধ্যে ইন্দোর এবং বিকানির, ২০৩৫-এর মধ্যে অমৃতসর এবং ২০৫০ সালের মধ্যে হায়দরাবাদের জলের একমাত্র উৎস হতে চলেছে ‘সারফেস ওয়াটার সোর্সেস’। অর্থাৎ, পুকুর, নদী, হ্রদ কিংবা এরকমই ভূপৃষ্ঠে থাকা কোনও জলের উৎস। কারণ, দ্রত ফুরিয়ে আসছে ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ। এই তালিকায় রয়েছে আজমিরের নামও।
এখনি সতর্ক হতে হবে সামনের দিনের জন্য প্রচুর গাছ লাগাতে হবে। এর সত্যি কোনও বিকল্প নেই। তবে এই ক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হবে। ইউক্যালিপটাসের মতো গাছ, যেগুলি ভীষণ পরিমাণে ভূগর্ভস্থ জল শুষে নেয়, এরকম গাছ এড়িয়ে যাওয়া উচিত জমিতে ক্যামিক্যাল ব্যবহার করা চলবে না। কাপড় কাচা বা ধোয়ার ক্ষেত্রে যত্নবান হতে হবে। কাণ্ডজ্ঞানহীনের মতো ভূগর্ভস্থ জল পাম্প করে তোলা চলবে না।
অনেকেই ভাবতে পারেন যে পৃথিবীর প্রায় ৭১ শতংশ তো জল দিয়ে তৈরি, তাহলে জল নিয়ে চিন্তার কী আছে? বাস্তব হল, এর মধ্যে ব্যবহারযোগ্য জলের শতাংশের হিসেব বেশ কম। তার পাশাপাশি পানীয় জলের পরিমাণ আরোও কম। ইতিমধ্যেই প্রথম বিশ্বের অনেক দেশেই দেখা গিয়েছে, সাধারণ মানুষকে জল কিনতে হচ্ছে প্যাকেটে। ভারতের মতো দেশে মাথা পিছু জল ব্যবহার নিয়ে কোনও ধারণা নেই। কিন্তু শেষের সেদিন কিন্তু বেশ ভয়ঙ্কর হতে পারে। তাই আর গাফিলতি বা পিছিয়ে থাকা নয়, জল নিয়ে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে এগোতে হবে সবাইকে।