World Meteorological Day: বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে পৃথিবী, চিন্তায় আবহবিদরা
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: আজ বিশ্ব আবহাওয়া দিবস (World Metrology Day)। প্রতিবছর ২৩ মার্চ পালিত হয় বিশ্ব আবহাওয়া দিবস। দিনটির একটা আলাদা তাৎপর্য রয়েছে। মনুষ্য স্বভাবের সঙ্গে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের যে সূক্ষ্ম যোগাযোগ রয়েছে, কীভাবে তা একে-অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তা এই দিনে ফুটিয়ে তোলা হয়।
সংযুক্ত রাষ্ট্রপুঞ্জের আওতাধীন বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার গঠন হয়েছিল ১৯৫০ সালে। আজকের দিনই। সেই দিনটিকে উদযাপন করা হয় বিশ্ব আবহাওয়া দিবস হিসেবে। জলবায়ু ও দীর্ঘমেয়াদী জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও আবহাওয়া সম্পর্কিত ঘটনাবলী নিয়ে তথ্য সরবরাহ করে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা। প্রতিবছর বিভিন্ন থিমকে সামনে রেখে পালিত হয় বিশ্ব আবহাওয়া দিবস। এবছরের থিম হল ‘আগামী প্রজন্মে জল, আবহাওয়া এবং জলবায়ুর ভবিষ্যত’।
ইদানিং বিশ্ব জুড়ে যে দুটো শব্দ প্রচুর শোনা যায় তা হলো – জলবায়ু পরিবর্তন। কোনও একটি জায়গায় বছরের পর বছর ধরে আবহাওয়ার যে গড়পড়তা ধরন, তাকেই বলা হয় জলবায়ু। আবহাওয়ার সেই চেনাজানা ধরন বদলে যাওয়াকেই বলা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। পৃথিবী গরম হয়ে পড়ছে এবং তার ফলে দ্রুত বদলে যাচ্ছে আবহাওয়ার বহুদিনের চেনাজানা আচরণ।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ুর এই পরিবর্তনে বদলে যাবে আমাদের জীবন যাপন। জলের সঙ্কট তৈরি হবে। খাদ্য উৎপাদন কঠিন হয়ে পড়বে। কোনও কোনও অঞ্চল বিপজ্জনক মাত্রায় গরম হয়ে পড়বে, এবং সেই সাথে সমুদ্রের জল বেড়ে বহু এলাকা প্লাবিত হবে। ফলে সে সব জায়গা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। চরম ভাবাপন্ন আবহাওয়া – অতিরিক্ত গরমের পাশাপাশি ভারি বৃষ্টি এবং ঝড়ের প্রকোপ অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকবে। ফলে জীবন এবং জীবিকা হুমকিতে পড়বে। গরীব দেশগুলোতে এসব বিপদ মোকাবেলার সক্ষমতা কম বলে তাদের ওপর এই চরম আবহাওয়ার ধাক্কা পড়বে সবচেয়ে বেশি।
তাপমাত্রা বাড়ায় উত্তর মেরুর জমাট বাধা বরফ এবং হিমবাহগুলো দ্রুত গলে যাচ্ছে। ফলে সাগরের উচ্চতা বেড়ে উপকুলের নিচু এলাকাগুলো ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। এছাড়া সাইবেরিয়ার মত অঞ্চলে মাটিতে জমে থাকা বরফ গলতে থাকায় বরফের নিচে আটকে থাকা মিথেন গ্যাস বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়বে। ফলে, মিথেনের মত আরেকটি গ্রিনহাউজ গ্যাস জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে। পৃথিবীর উষ্ণতা তাতে আরও বাড়বে এবং বন-জঙ্গলে আগুন লাগার ঝুঁকি বাড়বে। তাদের চির চেনা বসতির আবহাওয়া বদলের জেরে অনেক প্রাণী নতুন জায়গায় চলে যাবে বা যাওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু জলবায়ুর এই পরিবর্তন এত দ্রুত হারে এখন ঘটছে যে অনেক প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। যেমন, বরফ গলতে থাকায় পোলার বিয়ার বা উত্তর মেরুর শ্বেত ভালুকের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ছে।
পাশাপাশি, আটলান্টিক মহাসাগরের স্যামন মাছ বিপন্ন হবে, কারণ যেসব নদীতে ঢুকে তারা ডিম পেড়ে বাচ্চার জন্ম দেয়, সেগুলোর জল গরম হয়ে যাচ্ছে। ট্রপিক্যাল অঞ্চলের কোরাল রিফ বা প্রবাল-প্রাচীর উধাও হয়ে যেতে পারে, কারণ বায়ুমণ্ডলের অতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড সাগরের জলেতে মিশে জলের অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।
প্রাকৃতিক কারণে জলবায়ুতে স্বাভাবিকভাবেই কিছু পরিবর্তন হয়। কিন্তু যে মাত্রায় এখন তাপমাত্রা বাড়ছে তার মানুষের কর্মকাণ্ডেই প্রধানত দায়ী। মানুষ যখন থেকে কল কারখানা এবং যানবাহন চালাতে বা শীতে ঘর গরম রাখতে তেল, গ্যাস এবং কয়লা পোড়াতে শুরু করলো সেই সময়ের তুলনায় পৃথিবীর তাপমাত্রা এখন ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে।
বায়ুমণ্ডলে অন্যতম একটি গ্রিন হাউজ গ্যাস কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ উনবিংশ শতকের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। গত দুই দশকে বেড়েছে ১২ শতাংশ। বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণেও বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন বাড়ছে। গাছপালা কার্বন ধরে রাখে। ফলে, সেই গাছ যখন কাটা হয় বা পোড়ানো হয়, সঞ্চিত সেই কার্বন বায়ুমণ্ডলে নিঃসরিত হয়। ফলে আবহাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সতর্ক করতে এবছর বিশ্ব আবহাওয়া দিবসে জল, আবহাওয়া এবং জলবায়ুর ভবিষ্যতের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। কারণ, এই বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন আবহবিদ, পরিবেশবিদ, বিজ্ঞানীরা।