কালু রায়, বাস্তুঠাকুর, খেজুর ভাঙা- নানানভাবে কুমির পুজো করে বাংলা
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বাঙালিরা বহু লৌকিক দেবদেবীর আরাধনা করেন। তেমনই এক দেবতা হলেন কালু রায়। সুন্দরবনের মানুষজন কালু রায়ের পুজো করেন। মূলত, মৎস্যজীবি সম্প্রদায়ের মানুষজন কুমিরের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে, এই দেবতার আরাধনা করেন। দক্ষিণ রায়ের মতোই কালু রায় আদ্যন্ত মানুষের মতো একজন। তার বেশ পৌরাণিকযুদ্ধের দেবতার মতো। কালু রায়ের দুই হাতের, এক হাতে টাঙ্গি এবং অন্য হাতে ঢাল। কোমরে রয়েছে নানা রকম অস্ত্রশস্ত্র, পিঠে তীর ধনুক।
অরণ্যের দেবতাদের পুজোর প্রাচীন পদ্ধতি মেনে কালু রায়ের পুজো করা হয়। পুজোর জন্য বনঝাউ ফুল নিবেদন করা হয়। গঙ্গার বাহন রূপে কুমির নানা উপকথায় উঠে এসেছে। চৈত্র সংক্রান্তিতেও অনেকে কুমির পুজো করেন। চড়ক পুজোর বিভিন্ন অনুসঙ্গেও কুমির পুজোর চল রয়েছে। শিকারকেন্দ্রিক সমাজে কুমির পুজোর রেওয়াজ ছিল। সুন্দরবনে বহু বছর ধরে কুমির পুজো চলে আসছে।
এই গাজন-চড়কের সময় নানা উৎসব হয়। তেমনই একটি উৎসব হল খেজুর ভাঙা বা খেজুর সন্ন্যাসী উৎসব। গান গেয়ে গেয়ে গানের দল গ্রামবাসীদের খেঁজুর ভাঙা উৎসবে সামিল হওয়ার জন্য একজোট করেন। ঢাকের তালে তালে মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে সন্ন্যাসীরা খেজুর গাছে উঠে খেঁজুর ভেঙে আনেন। এই সময়টাতে খেঁজুরের রঙ থাকে সবুজ। পরের দিন খেজুর দিয়ে মাটির কুমির বানানো হয়। চৈত্রর শেষদিনে সকাল থেকেই মাটি নিয়ে কুমির গড়ার কাজে ব্যস্ত থাকে একদল সন্ন্যাসী। খেঁজুর দিয়ে কুমিরের গায়ের খাঁজকাটা রূপটি ফুটিয়ে তোলা হয়। বিকেলে মন্ত্রপাঠ, পাঁঠা বলি ও নানা অর্চনা হয়। সবশেষে সন্ন্যাসীরা মণ্ডপের চারদিক ঘুরে ঘুরে সম্মিলিতভাবে কুমিরকে বধ করেন। আবার অনেক জায়গায় কুমিরকে বাস্তু হিসেবেও পুজো করা হয়। যদিও এটি পৌষ সংক্রান্তিতে হয়।