বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

উনিশ শতকের বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনেছিলেন কোন বিদেশিরা?

April 7, 2023 | 3 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: উনিশ শতকের বাংলায় শিক্ষার প্রসারে খ্রিস্টান মিশনারীদের বিশেষ উদ্যোগ ছিল। এদের মধ্যে কয়েকজন বিদেশি কলকাতায় ইংরেজি শিক্ষার বিদ্যালয় খােলেন। প্রধানত খ্রিস্টধর্ম-সংক্রান্ত শিক্ষা দেওয়া হলেও এইসব বিদ্যালয়ে ইতিহাস, ভূগােল, ব্যাকরণ প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হত।

যে সমস্ত বিদেশিরা বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটিয়েছিলেন—

জেমস লঙ ছিলেন একজন অ্যাংলো-আইরিশ মিশনারী সোসাইটির ধর্মযাজক

১) জেমস লঙ: জেমস লঙ ছিলেন একজন অ্যাংলো-আইরিশ মিশনারী সোসাইটির ধর্মযাজক। একজন প্রাচ্যবিশারদ, শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক এবং মানবতাবাদী ব্যক্তিত্ব হিসাবে পরিচিতি। তিনি ভারতে চার্চ মিশনারী সোসাইটির সদস্য হিসাবে কলকাতায় আসেন। ১৮৪০-১৮৭২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কলকাতার ঠাকুরপুকুর মিশনের প্রধান ছিলেন। তিনি বাংলাভাষা নিয়ে চর্চা, বহু বই লিখেছিলেন। দীনবন্ধু মিত্রের নীল দর্পণ নাটকটি ইংরেজীতে অনুবাদ করে প্রকাশ করেছিলেন তিনি। সেকারণে তাঁকে জরিমানা সহ স্বল্প সময়ের কারাবাস ভোগ করতে হয়।

ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেড ছিলেন প্রাচ্যবিদ ও বৈয়াকরণিক

২) ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেড (১৭৫১-১৮৩০): ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেড ছিলেন প্রাচ্যবিদ ও বৈয়াকরণিক। তিনিই প্রথম বৈয়াকরণিক যিনি বাংলা ব্যাকরণ রচনায় উদাহরণ ব্যবহার করে বাংলা পাঠ ও বাংলা লিপি ব্যবহার করেন। এর আগে পর্তুগিজ ধর্মযাজকরা বাংলা ব্যাকরণ ও অভিধান রচনার করলেও নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হ্যালহেডই প্রথম বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন।

উইলিয়াম কেরি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর মিশন প্রতিষ্ঠা করেন

৩) উইলিয়াম কেরি: খ্রিস্টান মিশনারী উইলিয়াম কেরি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর মিশন প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তীকালে শ্রীরামপুর কলেজ নামে পরিচিত হয়। তিনি মার্শম্যান এবং উইলিয়াম ওয়ার্ড এর সহায়তায় একটি ইংরেজি বিদ্যালয় ও ছাপাখানা চালানোর কাজে ব্রতী হন। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন বাংলায় গদ্যের পৃষ্ঠপোষক, বাংলা পাঠ্যপুস্তকের প্রবর্তক, যাজক, অনুবাদক, সমাজ সংস্কারক, সাংস্কৃতিক নৃতত্ত্ববিদ।

কলকাতায় প্রকাশিত প্রথম সংবাদপত্রের প্রাণপুরুষ ছিলেন জেমস অগাস্টাস হিকি

৪) জেমস অগাস্টাস হিকি: কলকাতায় প্রকাশিত প্রথম সংবাদপত্রের প্রাণপুরুষ ছিলেন জেমস অগাস্টাস হিকি। তিনি নিজের ছাপাখানা, কাগজে ইংরেজদের দুর্নীতি, মানুষের অধিকারের খবর প্রকাশ করতেন। তাঁর পত্রিকার নাম ছিল “কি’স বেঙ্গল গেজেট; অর ক্যালকাটা জেনারেল অ্যাডভাইজার”। সে কারণে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চক্ষুশূল হয়ে ওঠে এই পত্রিকা।

আলেকজান্ডার ডাফ এদেশে ইংরেজি শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন

৫) আলেকজান্ডার ডাফ: স্কটিশ মিশনারী আলেকজান্ডার ডাফ এদেশে ইংরেজি শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আলেকজান্ডার ডাফ -এর স্কটিশ মিশন বাংলায় কয়েকটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইন্সটিটিউশন পরবর্তীকালে স্কটিশ চার্চ কলেজ নামে পরিচিত।

উনবিংশ শতাব্দীতে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও নারীশিক্ষা বিস্তারে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেছিলেন ডেভিড হেয়ার ও বেথুন। ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে ডেভিড হেয়ারের চেষ্টায় হিন্দু কলেজ” পরবর্তীকালে প্রেসিডেন্সি কলেজ স্থাপিত হয়। তাঁর উদ্যোগে ‘কলকাতা স্কুল বুক সােসাইটি” (১৮১৭ খ্রি.) এবং কলকাতা স্কুল সােসাইটি’ (১৮১৮ খ্রি.) প্রতিষ্ঠিত হয়। জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বিটন ওরফে বেথুন সাহেব বেথুন বালিকা বিদ্যালয় ও বেথুন কলেজ প্রতিষ্ঠা করে বাংলার নারী জাগরণের সূত্রপাত করেন। এছাড়াও বাংলার সামাজিক ও সংস্কৃতিক আন্দোলনে হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজির ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে হিন্দু কলেজের ছাত্রদের নিয়ে গড়ে তোলা সংগঠন ইতিহাসে’ইয়ংবেঙ্গল’ বা ‘নব্যবঙ্গ’ নামে পরিচিত ছিল। প্রচলিত সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় সংস্কার বা কুসংস্কারগুলির বিরুদ্ধে স্বাধীন মতামত প্রদানের উদ্দেশ্যে অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নারী শিক্ষা ও নারী স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ১৮৩০ সালে প্রকাশ করেছিলেন পার্থেনন পত্রিকা।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Education, #education system, #19th century, #Women Education

আরো দেখুন